Secrets of The Millionaire Mind Bengali Summary

by

Secrets of the millionaire mind হলো এমন একটি বই যেখানে লেখক T Harv Eker বারবার বোঝাতে চেয়েছেন যে বাইরের পৃথিবীতে ধনী বা সম্পদশালী হওয়ার জন্য আপনাকে অভ্যন্তরীণ ভাবেও ধনী হতে হবে, অর্থাৎ আপনার মানসিকতাও সেইরূপ হতে হবে।

শুরুতেই তিনি বলেছেন তার বলা একটি কথাও বিশ্বাস না করতে কারণ তিনি এই বইয়ে যা কিছু লিখেছেন তা তার জীবনের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত এবং সেগুলিকে ধ্রুব সত্য মেনে নেওয়ার মতো কিছুই নেই, এবং সেগুলি যে আপনার জীবনেও একইরকম ভাবে কার্যকর হবে তার কোনো মানে নেই।

কিন্তু তিনি এও বলেছেন যে এই সমস্ত সূত্রগুলি তার এবং তার বহু শিক্ষার্থীদের জীবনে অসাধারন ফল প্রদান করেছে, তাই আপনিও যদি ধনী হতে চান তাহলে এই বইয়ের সূত্রগুলি এমনভাবে পড়ুন ও নিজের জীবনে কাজে লাগান যেন এর ওপরেই আপনার জীবন নির্ভর করছে এবং লেখকের বিশ্বাস সঠিকভাবে এই সমস্ত সূত্র কাজে লাগালে আপনার জীবনে পরিবর্তন আসবেই।

লেখক লক্ষ্য করেছিলেন যে সমস্ত ধনী ব্যাক্তিদের চিন্তাধারায় সামঞ্জস্য থাকে এবং মধ্যবিত্ত ও গরীবদের চিন্তাভাবনার সাথে বিস্তর ফারাক থাকে তাই তিনি বারংবার ভেতর থেকে ধনী হওয়ার কথাই নানানভাবে বুঝিয়েছেন। সেই সমস্ত সূত্রগুলি প্রতিবারের মতোই আমি নিজের ভাষায় নিজের মতো করে সংক্ষেপে তুলে ধরবো।

সূচীপত্র
  1. Secrets of the Millionaire Mind Bengali Summary
  2. দ্বিতীয় অধ্যায় – Wealth Files

Secrets of the Millionaire Mind Bengali Summary

Your Money Blueprint

ধনী হওয়ার কথা ভাবলেই যা কিছু আমাদের মাথায় আসে তা হলো ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ ইত্যাদি এগুলি সবই ধনী হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এই সমস্ত কিছুই হলো বাহ্যিক দিক, এগুলো যতটা জরুরি ঠিক ততটাই জরুরী হলো টাকার অভ্যন্তরীন সূত্র বা দিকগুলি যেগুলি নির্ভর করে আপনার চিন্তাভাবনা বা মানসিকতার উপর।

আপনি টাকা সম্বন্ধে কি ভাবেন? নিজের সম্পর্কে কি ভাবেন? আপনি কি বিশ্বাস করেন? ধনীদের সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? আপনি কি সত্যি মনে করেন আপনি ধনী হওয়ার যোগ্য? এই সমস্ত অভ্যন্তরীন দিকগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি আর্থিকভাবে কতটা সফল হবেন তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার চিন্তা, আপনার চরিত্র, এবং আপনি কি বিশ্বাস করেন তার ওপর।

এখানে তিনি লেখক Stuart Wilde র একটি খুব সুন্দর উক্তি তুলে ধরেছেন যা হলো –

Your Income can grow only to the extent you do!

পৃথিবীর বেশিরভাগ ধনী ব্যক্তিরাই কিন্তু self made millionaire অর্থাৎ তারা নিজের প্রচেষ্টায় ধনী হয়েছে এবং কোনো কারণে যদি তারা তাদের সম্পত্তি হারিয়েও ফেলে তাহলেও তাদের পুনরায় millionaire হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগে না।

অপরদিকে এরকম কি শুনেছেন যে কেউ লটারি জিতে কোটিপতি হয়েছে এবং তার পর থেকে তাকে আর কখনো দারিদ্রতার মুখ দেখতে হয়নি।

লটারি জেতা বেশিরভাগ মানুষই খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের আগের আর্থিক অবস্থায় ফিরে যায় কারণ প্রচুর পরিমাণ অর্থ সামলানোর মতো অভ্যন্তরীন বা বাহ্যিক কোনোপ্রকার জ্ঞান ই তাদের থাকে না।

বেশিরভাগ মানুষই আর্থিক জ্ঞান সম্বন্ধে সচেতন নয়, তারা শুধুমাত্র বাইরের পৃথিবীতে দৃশ্যমান ঘটনাবলী অনুযায়ী কাজ করে চলে তাই ৮০% মানুষই নিজেদের জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা পায় না।

লেখক বলেছেন আমাদের জীবন একটি গাছের মতো এবং আমরা জীবনে যা কিছুই লাভ করি তা সেই গাছেরই ফল।

আমরা শুধুমাত্র ফলের ওপর মনোনিবেশ করি কারণ তা দৃশ্যমান কিন্তু সেই ফল তৈরি করছে যে গাছ তার শিকড়ের দিকে লক্ষ্যই করি না কারণ তা বাইরে থেকে দেখা যায় না।

অর্থাৎ যে কোনো জিনিসের আমরা বাইরেটা বা ওপরটা দেখি কিন্তু সেটাই সব নয়। হয়তো কোটিপতি কাউকে দেখে আপনি ভাবলেন সেই ব্যক্তি কত ভাগ্যবান কিন্তু আপনি দেখছেন না সেই কোটি টাকার পিছনে লুকিয়ে থাকা সেই ব্যক্তির বহুবছরের পরিশ্রম, প্রচেষ্টা তার মানসিকতা প্রভৃতি।

তাই গাছের ফল যদি অন্যরকম চান তবে সবার আগে শিকড়ের দিকে নজর দিন, দৃশ্যমান কিছু বদলাতে হলে সবার আগে অদৃশ্য কারনগুলিকে বদলান।

আমরা এই ব্রহ্মাণ্ডের অতীব ক্ষুদ্র অংশ, এবং প্রকৃতির নিয়মের বাইরে নই তাই আমাদের জীবনও তখনই সুন্দর ও স্বাছন্দ্যপূর্ণ হয় যখন আমরা প্রকৃতির নিয়মের সাথে নিজেদের জীবনকে সমরেখ করে চলি।

four planes of existence

এই পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্বের ক্ষেত্র শুধুমাত্র একটিই ভাবি আমরা কিন্তু আদতে তা নয়, বরং আমাদের অস্তিত্ব চার ধরণের ক্ষেত্রে যা উপরের ছবিটিতে দেখানো হয়েছে।

এখানে P হলো physical world, M হলো mental world, E হলো emotional world, ও S হলো spiritual world.

আমরা শুধু এই physical world এর নিজেদের অস্তিত্ব টুকুই জানি কারণ তা দৃশ্যমান কিন্তু এটা বুঝি না যে আসলে এটা শুধুমাত্র বাকি তিনটি ক্ষেত্রের সম্মিলিত প্রতিচ্ছবি।

আমরা কারণ ও ফলাফলের পৃথিবীতে বাস করি, বাহ্যিক পৃথিবীতে আপনি কতটা ধনী, কতটা সম্পদশালী, আপনার স্বাস্থ্য এই সমস্ত কিছুই হলো ফলাফল যার কারণ হলো বাকি তিন অদৃশ্য ক্ষেত্র, তাই ফলাফল বদলাতে চাইলে আপনাকে নিজের প্রোগ্রামিং বদলাতে হবে।

সর্বদা মাথায় রাখুন আপনার বাইরের পৃথিবী আপনার ভিতরের জগতেরই প্রতিফলন মাত্র।

লেখক এই বইয়ের প্রতি অধ্যায়ের শেষেই বুকে হাত রেখে ও মাথায় তর্জনী ঠিকিয়ে কিছু ভার্বাল declaration জোরালো স্বরে করার কথা বলেছেন যাতে আপনি একইসঙ্গে ব্রহ্মাণ্ড ও নিজের অবচেতন মনকে সেই ইতিবাচক তথ্যটি দিতে পারেন এবং কোনো কিছু নিজের জীবনে দ্রুত কাজে লাগাতে পারেন।

কারণ যা আমরা শুনি তা ভুলে যাই, যা দেখি তা মনে রাখি আর যা কিছু করি সেগুলোই ভালোভাবে বুঝতে পারি।

আপনার মনে হতেই পারে যে এভাবে জোরে জোরে declaration করার দরকার কি? মনে রাখুন এই পৃথিবীর সমস্তকিছুই হলো এনাৰ্জি, আর সবকিছুই এনার্জি র কোনো না কোনো রূপভেদ এবং প্রত্যেক এনার্জিরই স্পন্দনের নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক আছে।

তাই আপনি যখন আওয়াজ করে নিজের শরীরে স্পর্শ করে কিছু মন্তব্য করবেন তখন সেই এনার্জির কম্পন আপনার শরীরের প্রতিটি কোষের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হবে।

এই অধ্যায়ের পরে আপনি বুকে হাত রেখে বলুন “My inner world creates my outer world” এবার তর্জনীকে মাথায় ঠেকিয়ে বলুন “ I have a millionaire mind”.

আপনি টাকার সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ করেন অর্থাৎ আপনার ‘Money Blueprint’ কিরকম তা গড়ে ওঠে কতকগুলি বিষয়ের সমন্বয়ে।

সেগুলি হলো T → F → A = R এখানে T হলো Thoughts, F হলো Feelings, A হলো Actions এবং R হলো Results.

যেরকম আপনি চিন্তা করেন আপনার অনুভূতিও সেই অনুযায়ী কাজ করে, সেইমতন আপনি কাজ করেন এবং সেইরূপ ই ফল পান।

অর্থাৎ আপনার প্রাপ্ত ফলের পিছনে লুকিয়ে আছে আপনার করা কাজ, আবার সেই কাজ আপনি করেছেন আপনার অনুভূতি অনুযায়ী, যে অনুভূতি তৈরী হয়েছে আপনার চিন্তা থেকে।

আপনার বেশিরভাগ চিন্তাই আপনার অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত। তাই আপনার ‘Money Blueprint’ অনেকটাই নির্ভর করে আপনার পরিবার, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক প্রভৃতি লোকজন এবং তাদের থেকে আপনি কি কি শুনে এসেছেন তার ওপর।

যদি এই মুহূর্তে আপনি ধনী না হন তাহলে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন যা কিছু আপনি শুনে এসেছেন, দেখে এসেছেন এবং টাকার সম্পর্কে আপনার যা যা ধারণা তা ধনী হওয়ার পক্ষে সহায়ক নয় এবং যতক্ষণ না আপনি সেই ধারণাগুলিকে সচেতনভাবে বদলে ফেলছেন ততক্ষণ আপনার পক্ষে ধনী হওয়া সম্ভৱ নয়।

লেখক এক্ষেত্রে আগের সূত্রে সামান্য বদল এনে লিখেছেন P → T → F → A = R যেখানে P হলো programming তাই সবার আগে আপনাকে আপনার প্রোগ্রামিং এ বদল আনতে হবে।

আমাদের অবচেতন মন আবেগ ও যুক্তির মধ্যে সর্বদা আবেগকেই বেছে নেয়, তাই আপনার অবচেতন থেকে টাকা সম্বন্ধীত সমস্ত বিরূপ চিন্তাকে আগে সরিয়ে ফেলতে হবে।

টাকা কামানোর জন্য প্রচুর পরিশ্রম দরকার, টাকা ই সমস্যা ডেকে আনে, টাকা সমস্ত সুখ দিতে পারে না, কেবলমাত্র দুর্নীতিগ্রস্তরাই টাকা করতে পারে ইত্যাদি।

এই সব চিন্তা যদি মনের মধ্যে নিয়ে চলেন তবে আপনি নিজের অজান্তেই ইউনিভার্স কে জানাচ্ছেন যে আপনি টাকা চান না।

বরং ইতিবাচক দিকগুলি ভাবুন, টাকা কামাতে পরিশ্রম অবশ্যই দরকার কিন্তু সেটা আপনি কিভাবে আনন্দের সাথে উৎসাহিত হয়ে করতে পারেন তা ভাবুন।

টাকা না থাকাই আসলে বেশিরভাগ সমস্যার কারণ, সৎ ভাবেও আপনি অসীম সম্পত্তির অধিকারী হতে পারেন এবং সর্বোপরি আপনার কাছে টাকার প্রাচুর্য থাকলে আপনি কতজনকে সাহায্য করতে পারবেন তা ভাবুন।

আবার মনে করুন আপনার অবচেতনই আপনার চিন্তাগুলিকে গড়ে তোলে সেইমতো আপনি সিদ্ধান্ত নেন এবং কাজ করেন ও সেরকমই ফল পান।

এবার এই চিন্তায় বদল আনার জন্য লেখক চারটি বস্তুর কথা বলেছেন –

প্রথম হলো awareness – আপনি ততক্ষন অবধি কোনোকিছু বদলাতে পারবেন না যতক্ষণ আপনি তার অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত না হন।

দ্বিতীয় হলো understanding – যখন আপনি বুঝবেন যে আপনার চিন্তার উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে? সবকিছুই বাইরে থেকে হয়েছে কোনো চিন্তাই প্রথম থেকে আপনি নিয়ে জন্মাননি।

তৃতীয় হলো disassociation – যখন আপনি বুঝবেন যে আপনি আর আপনার চিন্তা এক নয়, এটা বোঝামাত্র আপনি ঠিক করতে পারেন যে আপনি এখন যা বা ভবিষ্যতে যা হতে চান সেই অনুযায়ী আপনি কোন চিন্তা গুলো ধরে রাখবেন এবং কোনগুলো ছেড়ে দেবেন।

কারণ আপনার সমস্ত চিন্তাভাবনাই অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত এবং আপনার মগজের স্টোরেজ এ সঞ্চিত কিছু ফাইল মাত্র তাই যে ফাইল গুলি এখন আর কার্যকরী নয় বা কোনো লাভজনক ফল দেবেনা সেগুলিকে বের করে ফেলে দিন।

চতুর্থ ধাপ হলো reconditioning – এই শেষ ধাপে আপনার কাজ হলো নতুন চিন্তা গ্রহণ করা যেগুলি আপনাকে ধনী হতে বা জীবনে সাফল্য লাভে সাহায্য করবে।

এবার পুনরায় আপনার হৃদয়ের ওপর হাত রেখে বলুন “What I heard about money isn’t necessarily true. I choose to adopt new ways of thinking that support my happiness and success.” এরপর তর্জনী মাথায় ছুঁয়ে বলুন “I have a millionaire mind.”

মনে রাখুন শুধু টাকা উপার্জনের কথা ভাবলেই হবে না, আপনার ধনী হতে চাওয়ার কারণটিও ইতিবাচক হওয়া দরকার।

যদি আপনার প্রচুর টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্য হিসেবে রাগ, ভয় বা অন্য্ কারোর কাছে নিজেকে প্রমাণ করার প্রচেষ্টা লুকিয়ে থাকে তাহলে সেই টাকা আপনাকে সুখ এনে দিতে পারবে না।

এরপর আবার হৃদয়ে হাত রেখে বলুন “I release my nonsupportive money experiences from the past and create a new and rich future.”

মাথায় আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”.

অতীতের ধারণা অনুযায়ী বয়ে যাবেন না বরং একটু থেমে গিয়ে সচেতনভাবে নিজের ভাবনা ও কাজগুলোকে লক্ষ্য করুন ও প্রয়োজন মতো সেগুলিতে পরিবর্তন আনুন।

মনে রাখুন আপনার মস্তিষ্কে বসবাসকারী প্রতিটি ভাবনার জন্যই আপনাকে মূল্য চোকাতে হয়, সেগুলি আপনাকে লাভ ও দিতে পারে আবার ক্ষতিও করতে পারে তাই কোন চিন্তাগুলিকে আপনি ওখানে থাকতে দেবেন তা সচেতনভাবে ঠিক করুন।

”Nothing has meaning except for the meaning you give it.”

আপনি যদি ধনী ব্যক্তিদের মতো চিন্তাভাবনা ও কাজ করেন তাহলে আপনি অবশ্যই ধনী হবেন।

হৃদয়ে হাত রেখে বলুন “I observe my thoughts and entertain only those that empower me.” মাথায় আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”.

দ্বিতীয় অধ্যায় – Wealth Files

Seventeen Ways Rich People Think and Act Differently from Poor and Middle-Class People

আপনি আপনার সুখ ও সাফল্যের অনুকূলে চিন্তা করবেন না কি প্রতিকূলে তা আপনি নিজেই ঠিক করতে পারেন।

এর পরে তিনি ১৭ টি wealth file এর কথা বলেছেন যেগুলি আপনিও নিজের জীবনে কাজে লাগিয়ে ধনী হতে পারেন এবং প্রতিটি file পড়ার শেষে পূর্বের মতোই declaration করুন।

১. ধনীরা বিশ্বাস করে আমরা আমাদের জীবন গড়ে তুলি, গরীবেরা মনে করে জীবনে সবকিছুই ঘটে চলে।

যদি আপনি আগেই ভেবে নেন যে জীবনে কোনোকিছুই আপনার হাতে নেই তাহলে তো কোনো কাজের উৎসাহই আপনি পাবেন না।

তাই যদি ধনী হতে চান অথবা জীবনে সাফল্য লাভ করতে চান তাহলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করুন যে আপনার সাফল্যের কারিগর আপনি নিজেই।

আর তিনটি জিনিস আপনাকে পুরোপুরি ছাড়তে হবে সেগুলি হলো Blame, Justification আর Complaining।

আপনি অপর সবকিছুকে দোষ দিয়ে, সমস্ত কিছুতে নালিশ করে আর নিজের করা সব কাজকে যথার্থ প্রতিপন্ন করার ক্রমাগত চেষ্টা করতে থাকলে কখনই সফল হতে পারবেন না।

হৃদয়ে হাত রেখে বলুন – “I create the exact level of my financial success!” এরপর মাথায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলুন – “I have a millionaire mind!”

২. ধনীরা টাকার খেলা খেলে জেতার জন্য আর গরীবেরা খেলে হেরে না যাওয়ার ভয়ে।

আপনার অর্থ উপার্জনের কারণ অত্যন্ত জোরালো হওয়া প্রয়োজন, প্রচুর অর্থ ও সম্পদ গড়ে তোলার চেষ্টা করুন এবং সেটাও আনন্দ ও উদ্যমের সাথে।

আপনার অর্থ রোজগারের মূল কারণ যদি শুধুমাত্র অস্তিত্ব রক্ষা ও নিরাপত্তা হয় তবে আপনি অর্থের প্রাচুর্য্য পাবেন কিভাবে?

যদি আপনার লক্ষ্য শুধুমাত্র আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া হয় তবে আপনি কখনই ধনী হতে পারবেন না কিন্তু যদি আপনার লক্ষ্য ধনী হওয়া হয় তবে আপনি অন্ততপক্ষে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করবেনই।

“If you shoot for the stars, you’ll at least hit the moon.”

হৃদয় স্পর্শ করে বলুন “My goal is to become a millionaire and more!” এরপর তর্জনী মাথায় ছুঁইয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

৩. ধনীরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ধনী হওয়ার জন্য আর গরীবরা শুধুমাত্র ধনী হতে চায়।

এর আগেই লেখক বলেছেন সমস্ত কিছুই এনার্জি এবং আপনি যখন কোনো চিন্তা ধারণ করেন তখন তা ব্রহ্মাণ্ড বা ইউনিভার্স এর কাছে বার্তা হিসেবে যায়।

তাই যদি আপনি ধনী হওয়ার ইচ্ছা রাখেন অথচ একইসাথে আপনার ‘Money Blueprint’ এমন সমস্ত file এ ভরা যা ধনী হওয়ার বিরূপ ধারণাযুক্ত তবে ব্রহ্মাণ্ডের কাছে একটি মিশ্র বার্তা যাবে এবং সে আপনাকে ধনী হতে সাহায্য করতে পারবে না।

বেশিরভাগ লোকের ধনী হতে না পারার কারণ হলো বেশিরভাগ মানুষই পরিষ্কারভাবে জানেই না যে সে ঠিক কি চায়।

আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আপনি জীবনে সেই সবকিছুই পান যেগুলি আপনি অবচেতন থেকে চান।

আপনি যদি সম্পদশালী হওয়ার জন্য পুরোপুরি সম্পূর্ণরূপে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ না হন তবে আপনি ধনী হতে পারবেন না।

এক্ষেত্রে তিনি W.H. Murray র একটি লেখার অংশ তুলে ধরেছেন যা হলো

Until one is committed, there is hesitancy, the chance to draw back, always ineffectiveness. Concerning all acts of initiative (and creation), there is one elementary truth, the ignorance of which kills countless ideas and splendid plans: that the moment one definitely commits oneself, then providence moves too. A whole stream of events issues from the decision, raising in one’s favor all manner of unforeseen incidents, meetings, and material assistance, which no man could have dreamt would have come his way.

হৃদয়ে হাত রেখে বলুন “I commit to being rich.” এবার মাথায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

৪. ধনীরা বড়ো চিন্তাভাবনা করে আর গরীবদের চিন্তাভাবনা হয় ক্ষুদ্র।

অর্থে উপার্জনের সূত্র খুব সহজ – যে পরিমাণ মূল্য বা Value আপনি বাজারে প্রদান করবেন তার সমানুপাতে আপনার উপাৰ্জন হবে।

আপনার এই Value নির্ভর করে চারটি জিনিসের উপর supply, demand, quality ও quantity।

লেখকের মতে এদের মধ্যে quantity অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার ব্যবসা যত বেশি পরিমাণ লোককে পরিষেবা দিতে পারবে আপনার উপার্জন ও তত বেশি হবে।

মনে রাখুন আপনার জীবন শুধুমাত্র আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আপনার জীবনের কার্য্যে যেন অন্যদের জন্যও কিছু অবদান আপনি রেখে যেতে পারেন।

প্রকৃত অর্থে ধনী আপনি তখনই হবেন যখন আপনি অন্যের জীবনে value add করতে পারবেন।

তিনি এখানে Buckminster Fuller এর উক্তি তুলে ধরেছেন – “The purpose of our lives is to add value to the people of this generation and those that follow.”

আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সহজাত প্রতিভা নিয়ে জন্মাই , এর কারণ ই হলো যে আমরা যেন সেই বিষয়কে অন্যের কাজে লাগাতে পারি যাতে আমরা স্বাভাবিকভাবেই দক্ষ।

গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিজেদের সহজাত প্রতিভাকে সর্বোচ্চ ভাবে কাজে লাগিয়ে জীবন কাটায় তারা অত্যন্ত সুখী হয়।

Marianne Williamson এর একটি লেখা তিনি এই প্রসঙ্গে তুলে ধরেছেন –

You are a child of God. Your playing small does not serve the world. There is nothing enlightened about shrinking so that other people won’t feel insecure around you. We are all meant to shine, as children do. We were born to make manifest the glory of God that is within us. It is not just in some of us; it is in everyone. And as we let our own light shine, we unconsciously give other people permission to do the same. As we are liberated from our own fear, our presence automatically liberates others.

হৃদয়ে হাত রেখে বলুন “I think big! I choose to help thousands and thousands of people!”

মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

৫. ধনীরা সুযোগের প্রতি মনোনিবেশ করে আর গরীবেরা বাধাবিপত্তির প্রতি মনোনিবেশ করে।

ধনীরা মনসংযোগ করে তারা কি চায় তার ওপর আর গরিবেরা মনসংযোগ করে তারা কি চায় না সেটার ওপর।

একটি Universal Law হলো – “What you focus on expands” অর্থাৎ আপনি যে বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেবেন সেটাই বাড়তে থাকবে বা প্রসারিত হতে থাকবে।

ধনীরা সুযোগের প্রতি মন দেয় তাই তারা বিভিন্নরকম জায়গা থেকে আরো অনেক সুযোগ পেতেই থাকে, অপরদিকে গরীবেরা সমস্যার প্রতি মনোযোগ দিয়ে নিজেদের জীবন সমস্যা জর্জরিত করে তোলে।

এরকম নয় যে জীবনে সমস্যা থাকবে না, সমস্যা তো যে কোনো কাজেই থাকবে কিন্তু সেটাকে সামলে মূল লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে চলাই সাফল্যের মূলমন্ত্র।

ধনী হবার আরেকটি অত্যন্ত সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হলো আপনি মনোযোগ দিন making, keeping ও investing এর প্রতি তাহলে আপনি ধনী হবেন ই।

হৃদয়ে হাত রেখে বলুন “I focus on opportunities over obstacles.” “I get ready, I fire, I aim!”

মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

৬. ধনীরা অপর ধনী ও সফল ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করে, গরীবেরা ধনীদের প্রতি তিক্ত মনোভাব পোষণ করে।

যদি আপনি ধনীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব রাখেন, তাদের ঈর্ষা বা ঘৃণা করেন তবে আপনি কখনই ধনী হতে পারবেন না।

অন্যের প্রতি রাখা যে কোনো ধরনের নেতিবাচক মনোভাব প্রকৃতপক্ষে আপনার নিজেরই ক্ষতি করে।

তাই ধনী হতে চাইলে আপনিও ধনীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। এখানে লেখক একটি হুণ দর্শনের কথা তুলে ধরেছেন যা হলো – “Bless that which you want.

If you see a person with a beautiful home, bless that person and bless that home. If you see a person with a beautiful car, bless that person and bless that car. If you see a person with a loving family, bless that person and bless that family. If you see a person with a beautiful body, bless that person and bless their body.”

এবারে হৃদয়ে হাত রেখে বলুন

“I admire rich people!” “I bless rich people!” “I love rich people!” “And I’m going to be one of those rich people too!”

মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

৭. ধনীরা অপর ইতিবাচক ও সফল ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটায় আর গরীবরা নেতিবাচক ও অসফল ব্যক্তিদের সঙ্গলাভ করে।

ধনী ব্যক্তিদের ধনী হবার অভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক দিকগুলিকে যদি আপনি অনুসরণ করেন তবে আপনিও ধনী হয়েই উঠবেন।

তাই ধনীরা অন্যান্য সফল ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করে, তাদের দেখে নিজেদের অনুপ্রাণিত করে এবং বলে ওনারা যদি পেরে থাকেন তবে আমিও পারবো।

মনে রাখবেন আপনি কোনো নেতিবাচক ব্যক্তিকে বদলাতে পারবেন না, বরং তার থেকে দূরে থাকুন এবং নিজেকে এতটাই সমৃদ্ধ করে তুলুন যাতে আপনার আলোয় অন্যদের অন্ধকার দূরীভূত হয়।

আপনি কি জানেন বেশিরভাগ মানুষের আয় তাদের নিকটতম বন্ধুদের গড় আয়ের ২০% এর মধ্যেই থাকে তাই কার বা কাদের সঙ্গে আপনি সময় কাটাবেন তা খুব ভেবেচিন্তে নিশ্চিত করুন।

হৃদয়ে হাত রেখে বলুন

“I model rich and successful people.” “I associate with rich and successful people.” “If they can do it, I can do it!”

মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

৮. ধনীরা নিজেদের ও নিজেদের value র প্রচার করে আর গরীবেরা প্রচারকে খারাপ মনে করে।

ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রচার খুব জরুরী বিষয়, ভেবে দেখুন লোকে যদি আপনার ব্যবসা বা আপনার পরিষেবার ব্যাপারে জানতেই না পারে তাহলে আপনি তাদের কাছে পৌঁছবেন কি করে?

Selling ও মার্কেটিং এর ব্যাপারে অনেকেরই খারাপ মনোভাব থাকে বিভিন্ন বিরক্তিকর বা তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে কিন্তু আদতে এর কোনটিও খারাপ নয় বরং যথেষ্ট দরকারি তাই ধনী হতে চাইলে এগুলিও রপ্ত করুন।

Robert Kiyosaki তার বই Rich Dad, Poor Dad এ বলেছেন ব্যবসার ক্ষেত্রে selling এর গুরুত্ব অপরিসীম এমনকি তিনি নিজেও কিন্তু নিজেকে best writing author নয় বরং best selling author বলেছেন।

যদি আপনি নিজে জানেন যে আপনি আপনার ব্যবসার মাধ্যমে বা নিজে যে পরিষেবা দিতে চাইছেন তার দ্বারা অনেকে উপকৃত হবে তবে আপনি সেটা লুকিয়ে রাখবেন কেন? সেটা প্রচার করাই তো উচিত।

হৃদয়ে হাত রেখে বলুন “I promote my value to others with passion and enthusiasm.” মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

৯. ধনীরা তাদের সমস্যার থেকে বড়ো, গরীবরা তাদের সমস্যার থেকে ছোটো।

গরীবরা তাদের সমস্যাগুলি থেকে দূরে পালাতে চায়, কিন্তু ধনীরা নিজেদের এতটাই সমৃদ্ধ করে তোলে যে তাদের সমস্যাগুলো তখন আর সমস্যাই থাকে না।

তাই problem oriented নয় solution oriented হয়ে উঠুন। আপনি যত বড় সমস্যা সামলাতে পারবেন তত বড় ব্যবসাও সামলাতে পারবেন, তত বেশি দায়িত্বও নিতে পারবেন এবং সর্বোপরি তত বেশি সম্পদ ও সামলাতে পারবেন।

শুধুমাত্র টাকা উপাৰ্জন ই যথেষ্ট নয় সেটাকে সামলানোর ক্ষমতাও আপনাকে গড়ে তুলতে হবে।

বুকে হাত রেখে বলুন “I am bigger than any problems.” “I can handle any problems.” এবার মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

১০. ধনীরা অত্যন্ত ভালো গ্রহীতা, গরীবরা তা একেবারেই নয়।

অনেক মানুষই নিজের যোগ্যতা সম্বন্ধে সন্দিহান, যদি আপনিও তাই হন তাহলে এই ভাবনা দূরে সরান, ধনী হতে চাইলে নিজেকে যোগ্য হতেই হবে এবং আপনি যোগ্য নন এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই।

যদি আপনি মনে করেন আপনি যোগ্য তবে আপনি যোগ্য যদি আপনি মনে করেন আপনি যোগ্য নন তবে আপনি যোগ্য নন, আপনার গল্পের নায়ক আপনি নিজেই হতে পারেন।

প্রত্যেক দাতার জন্য একজন গ্রহীতার প্রয়োজন, একইভাবে প্রত্যেক গ্রহীতার জন্য একজন দাতারও প্রয়োজন তাই আপনি যদি ভালো গ্রহীতা না হন তবে আপনি অন্যদের দাতা হওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করছেন।

একইসাথে আপনি ইউনিভার্স কেও এই বার্তা পাঠাচ্ছেন যে সে যেন আপনাকে কিছু না পাঠায় কারণ আপনি তো গ্রহণ করতেই রাজি নন, সুতরাং নিজের প্রাপ্ত অংশ থেকেও নিজেকে আপনি বঞ্চিত করছেন।

কিন্তু আপনি যদি আপনার প্রাপ্ত অংশ গ্রহণ না করেন তবে ইউনিভার্স সেটি এমন কাউকে পাঠাবে যে ভালো গ্রহীতা, আর এটাই কারণ ধনীরা ধনী হয়ে চলে এবং গরীবরা আরো গরীব হয়।

যেভাবে প্রকৃতি কারোর প্রতি কোনো বৈষম্য দেখায় না সেই একই কথা টাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, টাকা তার কাছেই যাবে যে সেটা গ্রহণ করতে সবরকম ভাবে প্রস্তুত।

আপনি ভালো গ্রহীতা হয়ে শুধুমাত্র প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন তা নয়, আপনি সবকিছুই প্রচুর পরিমাণে পাবেন যেমন ভালোবাসা, সুখ, সাফল্য ইত্যাদি। কারণ আপনি কোনোকিছু যেভাবে করেন আপনি সবকিছুই সেভাবেই করেন।

বুকে হাত রেখে বলুন “I am an excellent receiver. I am open and willing to receive massive amounts of money into my life.” এবার মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

১১. ধনীরা তাদের ফলের বিনিময়ে উপার্জন করে আর গরীবেরা উপার্জন করে সময়ের বিনিময়ে।

The Almanack of Naval Ravikant বইয়ের summary থেকে আমরা আগেই জেনেছি যে আপনি আপনার সময় বিক্রি করে কখনই ধনী হতে পারবেন না।

দেখুন সময়ের বিনিময়ে অর্থ উপাৰ্জন অর্থাৎ মূলত চাকরি করে টাকা রোজগার করা খারাপ কিছু নয়, কিন্তু তাতে যে পরিমাণ অর্থ আপনি আয় করছেন আপনি কি ততটুকুই আয়ের যোগ্য নাকি আপনি ওই একই সময়ে আরো বেশি অর্থ রোজগার করতে পারেন সেটা নিজে ভেবে দেখুন।

বেশিরভাগ ধনী ব্যক্তিই তাদের টাকাকে কাজে লাগায় সম্পদের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য , সময়কে নয়।

Naval Ravikant এর মতোই T Harv Eker ও মনে করেন প্রত্যেকেরই নিজস্ব ব্যবসা থাকা উচিত তা ফুল টাইম হোক বা পার্ট টাইম কারণ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত millionaire ই ব্যবসার মাধ্যমেই সম্পদশালী হয়েছে।

নিজের বুকে হাত রেখে বলুন “I choose to get paid based on my results.” এবার মাথায় আঙ্গুল দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

১২. ধনীরা মনে করে দুটোই পাওয়া সম্ভব, গরীবরা মনে করে হয় এটা নয়তো ওটা।

ধনীরা বাস করে প্রাচুর্য্যে ভরা জীবনে তাদের চিন্তাভাবনাও হয় সেইমতো আর গরীবদের চিন্তাভাবনা ও জীবন সীমাবদ্ধতায় ভরা।

আপনি কি একইসাথে একটি সফল কেরিয়ার গড়তে চান আবার পরিবারের সাথে ভালোভাবে সময়ও কাটাতে চান ? আপনি কি ব্যবসাতেও সফল হতে চান আবার জীবনে বিনোদন ও উপভোগ করতে চান ? আপনি কি প্রচুর টাকা কামাতে চান আবার একইসাথে চান আপনার জীবনের মানেও থাকুক ?

উপরের প্রতিটির প্রশ্নের ক্ষেত্রে যদি আপনার উত্তর হয় হ্যাঁ অর্থাৎ আপনি মনে করেন প্রত্যেক ক্ষেত্রে দুটোই সম্ভব তবে আপনার চিন্তাভাবনা প্রাচুর্য্য পূর্ণ এবং ধনী বা সফল হওয়ার সহায়ক, অপরদিকে যদি আপনার মনে হয় না এগুলোর মধ্যে যে কোনো একটাই সম্ভব তবে আপনার চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ, সচেতন হোন এবং একে বদলানোর চেষ্টা করুন।

এই বদল আনার জন্য এখন থেকে এটা অথবা ওটা দুটোর মধ্যে বাছতে না বসে প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাবুন আপনি দুটোই কিভাবে পেতে পারেন।

বুকে হাত রেখে বলুন “I always think ‘both.’ ” এবার মাথায় তর্জনী দিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

১৩. ধনীরা তাদের Net Worth এর প্রতি মনোযোগ দেয় আর গরীবরা শুধুমাত্র কাজ করে উপার্জিত অর্থের প্রতি।

আপনি কত টাকা উপাৰ্জন করছেন সেটা নয়, Net Worth ই হলো সম্পদের সঠিক গণনা। High net worth গড়ে তোলার জন্য যে চারটি বিষয়ের প্রয়োজন সেগুলি হলো – Income, Savings, Investments ও Simplification.

Net Worth এর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আপনাকে অ্যাক্টিভ আয় বা সময়ের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের সাথে সাথেই প্যাসিভ আয়ের বিভিন্ন উৎস ও গড়ে তুলতে হবে।

আর যদি সেভিংস ও ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগের কথা বলতে হয় তাহলে বলবো টাকার দশটি সূত্র নিবন্ধটি একবার পড়ে নেবেন।

আর বাকি রইল simplification বা সরলীকরণ, আপনার সঞ্চয় ও বিনিয়োগের প্রতি সচেতন হোন এবং ব্যাপারগুলিকে সরল রাখুন, আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে অযথা জটিল করে তুলবেন না।

আপনার জীবনকেও সহজ রাখুন আর মনে রাখুন আপনি যে বিষয়ে মনোযোগ দেবেন আপনার এনার্জি ও সেই দিকেই ব্যয়িত হবে “Where attention goes, energy flows and results show”.

এর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে “What you focus on expands“ তাই আপনি যদি নিজের net worth এর প্রতি মনোনিবেশ করেন তবেও সেটিও বাড়বে।

বুকে হাত রেখে বলুন “I focus on building my net worth!” এবার মাথায় তর্জনী দিয়ে স্পর্শ করে বলুন “I have a millionaire mind!”

১৪. ধনীরা তাদের টাকাকে দক্ষতার সাথে সামলায়, গরীবরা তা একেবারেই পারে না।

অনেকেই ভাবেন টাকা সামলানো একটা বিড়ম্বনার কাজ যাতে তাদের স্বাধীনতায় বাঘ্যাত ঘটে কিন্তু বাস্তবে আপনি টাকাকে সঠিকভাবে সামলাতে পারলে তবেই জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা পেতে পারবেন, অর্থাৎ যখন আপনাকে আর শুধুমাত্র অর্থের জন্য কাজ করতে হবে না, আর এর থেকে ভালো স্বাধীনতা কি হয় তা আমার অন্তত জানা নেই।

আবার অনেকে মনে করে সামলানোর মতো টাকা কোথায়? যখন আমার অনেক টাকা হবে তখন আমি money ম্যানেজমেন্ট এর বিষয়ে শিখবো কিন্তু সত্যিটা হলো যখন আপনি money ম্যানেজমেন্ট জানবেন তখনই আপনি অনেক টাকা করতে পারবেন।

প্রকৃতির নিয়মেই আপনি সেটাই পাবেন আর ততটাই পাবেন যতটা আপনার ধারণক্ষমতা। আপনি প্রকৃতিকে নিজের অভ্যাসের দ্বারা দেখান যে আপনি কত টাকা সামলাতে পারেন তবেই তো আপনি সেটা পাবেন।

হৃদয় স্পর্শ করে বলুন “I am an excellent money manager.” এবার তর্জনী মাথায় ঠেকিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

১৫. গরীবরা টাকার জন্য কাজ করে আর ধনীদের টাকা তাদের হয়ে কাজ করে চলে।

অনেকেরই বদ্ধ ধারণা থাকে যে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং এটা যে পুরোপুরি ভুল তাও নয়।

ধনীরাও পরিশ্রম করে, কিন্তু সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, অর্থ উপার্জনের সাথে সাথেই তারা তাদের উপার্জিত টাকার কিছু অংশকে কাজে লাগাতে শুরু করে কারণ তারা জানে যত তাড়াতাড়ি এবং যত বেশি টাকা তাদের হয়ে কাজ করবে তত কম সময় তাদেরকে সক্রিয়ভাবে পরিশ্রম করতে হবে।

টাকাকে কাজে লাগানোর জন্য আপনি অন্যের শ্রম, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চলা ব্যবসা বা বিনিয়োগকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারেন।

যখন আপনার প্যাসিভ আয়ের পরিমাণ আপনার খরচকে ছাপিয়ে যাবে তখন আর আপনাকে নিজের মূল্যবান সময় বিক্রি করে কাজ করতে হবে না।

এবং লেখকের মতে এর জন্য সেরা দুটি উপায় হলো সরাসরি আপনার টাকাকে বিনিয়োগের মাধ্যমে কাজে লাগানো অথবা ব্যবসাকে কাজে লাগানো।

ধনীরা তাদের অর্জিত প্রতিটি টাকাকে আরো কয়েকশ টাকার বীজ হিসেবে দ্যাখে, যে কয়েকশ টাকাকে আবার তারা কয়েক হাজার টাকা তৈরির কাজে লাগাতে পারবে।

হৃদয় স্পর্শ করে বলুন “My money works hard for me and makes me more and more money.” এবার তর্জনী মাথায় ঠেকিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

১৬. ধনীদের ভয় তাদের কাজকে থামাতে পারে না, গরীবরা তাদের কাজ থামিয়ে দেয়।

এর আগেই বোঝানো হয়েছে যে ধনী হতে গেলে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন দুই দিকেরই সমান প্রয়োজন রয়েছে আর এই দূয়ের মাঝের সেতু হলো কাজ বা কর্ম।

আর এই কাজ করা থেকে মানুষকে বিরত করে ভয়, সন্ধ্বিগ্ধ্তা, অনিশ্চয়তা, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি।

যদি এই সমস্ত কিছুতে আপনিও কাজ করা থামিয়ে দেন তবে ধনী বা সফল হওয়া মুশকিল কারণ ধনী তারাই হতে পারে যারা এই সমস্ত কিছুকে অতিক্রম করেও কাজ করতে থাকে।

জীবনে আপনি যদি শুধুমাত্র সহজ কাজগুলি করতে চান তবে আপনার জীবনটাই কঠিন হয়ে পড়বে, আর যদি জীবনে কঠিন কাজগুলি করতে থাকেন তবে জীবনটা সহজ হয়ে উঠবে।

‘If you are willing to do only what’s easy, life will be hard. But if you are willing to do what’s hard, life will be easy.’

বেশিরভাগ সময়ই আমরা ভুলে যাই যে আমরা আমাদের মন নই, শরীরের বাকি অংশের মতোই মন ও একটি অংশ আর যদি আপনি মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ও প্রশিক্ষিত করার দক্ষতা গড়ে তুলতে পারেন তবে আপনি সুখ ও সাফল্য দুই ই পাবেন।

মনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সবার আগে লক্ষ্য করুন প্রতি মুহূর্তে আপনার মনে কি ধরণের চিন্তা আসছে, যদি সেগুলি নেতিবাচক বা আপনার সাফল্যের পথে সহায়ক না হয় তবে সচেতনভাবে সেগুলিকে ইতিবাচক চিন্তা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করুন।

আমাদের সহজাত ক্ষমতা আছে নিজের চিন্তাকে বদলে ফেলার, এই বিষয়ে The Monk Who Sold His Ferrari বইয়ে opposition thinking এর কথা বলা হয়েছিল।

মনে রাখুন আপনার মনের দ্বারা আপনি নিয়ন্ত্রিত হবেন না, আপনি হবেন আপনার মনের নিয়ন্ত্রক এবং আপনার মনে কোন চিন্তা কি ধরণের ভাবনা স্থান পাবে তা আপনিই নির্বাচন করবেন।

এবার হৃদয় স্পর্শ করে বলুন “I act in spite of fear.” “I act in spite of doubt.” “I act in spite of worry.” “I act in spite of inconvenience.” “I act in spite of discomfort.” “I act when I’m not in the mood.” এবার তর্জনী মাথায় ঠেকিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

১৭. ধনীরা ক্রমাগত শিখতে থাকে এবং নিজেদের সমৃদ্ধ করতে থাকে, গরীবরা মনে করে আমরা সব জানি।

’আমি সব জানি’ এই শব্দবন্ধটি যে কোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর, যদি আপনি শুধুমাত্র কোনো বিষয় শুনে থাকেন, পড়ে থাকেন, বা অন্যের সাথে আলোচনা করে থাকেন এবং ভাবেন আপনি সেই বিষয়টি জানেন তবে আপনি মূর্খ।

কারণ কোনো বিষয় ভালোভাবে আপনি তখনই জানবেন যখন সেই বিষয়টি নিয়ে আপনি বাঁচবেন অর্থাৎ নিজে সেই বিষয়টি নিয়ে বা কাজ করে জীবন কাটাবেন।

তাছাড়া কোনো বিষয়ে যদি আপনি আগেই ভেবে নেন যে আপনি সব জানেন তবে তো আপনার কাছে নতুন কিছু শেখার কোনো সুযোগই রইল না।

আপনাকে সব জানতে হবে এরকমটা নয়, আর কোনো বিষয়ে সবকিছু জানা তো অসম্ভব কিন্তু আপনাকে ক্রমাগত শিখতে থাকতে হবে।

পৃথিবীর সমস্ত কিছুই সতত পরিবর্তনশীল তাই আপনি যদি নিজেকে না সমৃদ্ধ করতে থাকেন এবং একই অবস্থায় থেকে যান তাহলে তা আপনার জন্যই ক্ষতিকর ’If you are not growing, you are dying’.

ধনী ব্যক্তিরা এটাও জানে যে প্রচুর অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সম্পদশালী হওয়া নয়, আপনি যাতে আপনার সেরা সংস্করণ হয়ে উঠতে পারেন তাই আপনি বিত্তশালী হবেন।

এবার হৃদয় স্পর্শ করে বলুন “I am committed to constantly learning and growing.” এবার তর্জনী মাথায় ঠেকিয়ে বলুন “I have a millionaire mind!”

এই সূত্রগুলি শুধু পড়া জোরে জোরে বলাই যথেষ্ট নয়, প্রতিনিয়ত জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে এগুলিকে কাজে লাগান আর আসল বইটি অবশ্যই সংগ্ৰহ করে পড়ুন।

secrets of the millionaire mind 1

Limitless Bengali Book Summary

থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ । Think and Grow Rich Bangla Summary

The Power of Your Subconscious Mind Bengali Book Summary

DMCA.com Protection Status

Spread the love

Leave a Comment

error: Content is protected !!