আপনি কি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইছেন এবং সামাজিক বিয়ের সাথে সাথে রেজিস্ট্রি বিয়েটাও আগেই বা সামাজিক বিয়ের দিন সেরে ফেলতে চাইছেন ?
তাহলে এই লেখা আপনার সুবিধার জন্যই। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো পশ্চিমবঙ্গে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করার নিয়ম, রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করতে কি কি লাগে?এই এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী।
এই লেখাটি সম্পূর্ণ নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা তাই আশা করি ইন্টারনেটে “online marriage registration in west bengal” খুঁজলে যা তথ্য পাওয়া যাবে, তার থেকে যারা বিয়ে করতে চলেছেন তাদের জন্য আরো ভালো করে বোঝানোর উপযোগী করে লেখার প্রয়াস করা হলো।
এখন পশ্চিমবঙ্গে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে ফলে কোনো ঝঞ্ঝাট ছাড়াই বাড়ি বসেই কম্পিউটরে বা ফোনেই ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন এর জন্য আবেদন করে ফেলতে পারেবন।
পশ্চিমবঙ্গে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি / Marriage Registration in West Bengal
১) প্রথমে https://rgmwb.gov.in/MARREG_Portal/MARREG_Home.aspx লিংকে ক্লিক করুন।
উপরের লিংকে ক্লিক করলে এরকম একটি পেজ খুলে যাবে।

২) এরপর ‘রেজিস্টার ইওর ম্যারেজ’ লেখাটির উপর ক্লিক করুন।

৩) ক্লিক করে যে পেজ টি খুলবে তাতে “Click Here to apply online” লেখাটির উপর ক্লিক করতে হবে।
এই লিংকে এর উপর ক্লিক করার আগে, এই রেজিস্ট্রি করার যে আবেদন ফর্মটি ভরতে হবে তাতে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করতে কি কি লাগে অর্থাৎ আপনার কি কি কাগজ পত্র স্ক্যান করে, কত সাইজের মধ্যে আপলোড করতে হবে তার জন্য গাইডলাইন পড়ে নিন।

(গাইডলাইন গুলির সারসংক্ষেপ নিচে বর্ণিত হলো – তাও নিজেরা আবেদন করার সময় একবার গাইডলাইন পরে নেবেন )
কি কি ডকুমেন্টস নিয়ে ফর্ম ফিল আপ করতে বসবেন তা দেখে নিন এক ঝলকে /রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করতে কি কি লাগে?
ক ) ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই ফোন নং ও ইমেইল আইডি থাকতে হবে।
খ) পাসপোর্ট সাইজ ছবি – দুজনেরই ই বর্তমান রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ স্ক্যান করে রাখতে হবে। স্ক্যান করা ছবির সাইজ হবে ৫০ KB এর মধ্যে। শুধুমাত্র .JPG, .JEPG, .PNG ফরম্যাটেই ছবি আপলোড করতে হবে।
ছবির ব্যাক গ্রাউন্ড সাদা বা কোনো হালকা রঙের হওয়া ই ভালো। চশমা থাকা অবস্থায় ছবি তুললে দেখতে হবে যেন চোখ স্পষ্ট বোঝা যায় অর্থাৎ ক্যামেরার আলো পড়ে ঝাপসা না হয়ে যায়।
পাসপোর্ট সাইজ ছবির উপরে সই করতে হবে এমন ভাবে যাতে মুখের উপর দিয়ে সই এর লেখা না যায়। তারপর সেই সই সমেত ছবিটি আপলোড করতে হবে।
গ) জন্মতারিখের কাগজপত্র – জন্মতারিখের উল্লেখ আছে এমন ডকুমেন্টস (দুজনের ই ) তা ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট , মাধ্যমিকের অ্যাডমিট এর মধ্যে যেকোনো একটা হলেই হবে।
স্ক্যান করা জন্মপ্রমাণপত্রের ডকুমেন্টস গুলি শুধুমাত্র নন-editable পিডিএফ ফরম্যাটেই হতে হবে এবং তা ৩০০ KB এর মধ্যে হবে।
ঘ) ঠিকানা সম্পর্কিত কাগজ পত্র – পাত্র – পাত্রী উভয়েরই বাড়ির ঠিকানা র উল্লেখ আছে , এমন ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে এবং এটিও আগেরটির মতোই স্ক্যান করা অবস্থায় পিডিএফ ফরম্যাটেই ৩০০ kB এর মধ্যে হতে হবে।
(বর্তমান বাড়ির ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা যাদের ক্ষেত্রে আলাদা তাদের সেই সম্পর্কিত ডকুমেন্টস আলাদা করে স্ক্যান করতে হবে, আর যাদের ঠিকানার পরিবর্তন নেই তাদের যদি আধার কার্ডেই সব তথ্য থাকে তাহলে শুধু সই করা ছবি ও আধার কার্ড স্ক্যান করা থাকলেই তা জন্মপ্রমাণপত্র, স্থায়ী ঠিকানা, ও বর্তমান ঠিকানার জায়গায় দেওয়া যেতে পারে, অর্থাৎ সবেতেই আধার কার্ড আপলোড করে দিলেই কাজ মিটে যাবে।)
৪. গাইড লাইন পড়া হয়ে গেলে “Click Here to apply online” এ ক্লিক করলে তলার পেজ টি খুলে যাবে তাতে ‘Proceed’ লেখা টির উপর ক্লিক করুন।

৫. এরপর আর একটি পেজ খুলে যাবে যেটি দেখতে হবে খানিক এরকম –

সেখানে প্রথমে আপনি কোন আইনে বিয়ে করতে চলেছেন তা আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে।
যদি আপনি সামাজিক বিয়ের দিন বা সামাজিক বিয়ের আগে কোনো দিন রেজিস্ট্রি করে নিতে চান তাহলে আপনাকে স্পেশাল ম্যারেজ act ১৯৫৪, under section ১৬ সিলেক্ট করতে হবে। ঠিক এইভাবে –

এরপর এখানে পাত্র পাত্রীর সমস্ত তথ্য দিতে হবে। প্রথমে আসবে পাত্রের সমস্ত তথ্য দেবার ফর্ম যা কিনা ‘Details of Groom’ নামে লেখা আছে ।
পাত্রের জন্মতারিখের প্রমাণপত্র, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার স্ক্যান করে রাখা ডকুমেন্টস গুলি আপলোড করতে হবে।
এরপর পাত্রীর সমস্ত তথ্য দিতে হবে। পাশে থাকা Details of Bride ট্যাব এ ক্লিক করলেই চলে আসবে পাত্রীর সমস্ত তথ্য দেবার ফর্ম।
এরপর পাত্রীর জন্মতারিখের প্রমাণপত্র, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার স্ক্যান করে রাখা ডকুমেন্টস গুলি আপলোড করতে হবে।

এরপর একইভাবে প্রতিটা ট্যাবে ক্লিক করে তথ্য দিতে থাকবেন। যেমন কবে কোন দিন, কোথায় সামাজিক বিবাহ করতে চলেছেন ইত্যাদি।
৬. এরপরের ধাপ হলো আপনি কার মাধ্যমে নিজের বিয়েকে রেজিস্টার করাতে চান সেই ম্যারেজ অফিসারকে বেছে নেওয়ার পালা।
পাত্র ও পাত্রীর মধ্যে যেকোনো একজনের ঠিকানা, যে থানার অধীনে থাকবে সেই থানার অধীনে যে যে ম্যারেজ অফিসার আসবে আপনি থানা সিলেক্ট করলেই সেই অফিসারদের লিস্ট পেয়ে যাবেন।
এরপর আপনার বাড়ি থেকে যে অফিসার কাছে বলে মনে হবে বা সুবিধাজনক হবে তাকে সিলেক্ট করতে পারবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ – এখানে একটা কথা জেনে রাখা খুব দরকার – এই পোর্টালে বিভিন্ন থানার অধীনে ম্যারেজ অফিসারদের যে লিস্ট থাকে তাতে অফিসারদের নাম-ঠিকানা-ফোন নং-অফিস ঠিকানা দেওয়া থাকে। অফিসার সিলেক্ট করার আগে একবার যে অফিসারদের আপনার বাড়ির কাছাকাছি বলে মনে হচ্ছে তাদের সাথে একবার সমস্ত বিষয়ে কথা বলে নিন এবং তাদের পারিশ্রমিক কত তাও জেনে নিন কারণ কেউ বলবে ৮০০০ তো কেউ বলবে ৫০০০ তো কেউ ৩০০০, তাই আপনার যার কাছে সুবিধা তার কাছেই করবেন। এছাড়াও আপনি রেজিস্ট্রার এর বাড়ি বা অফিসে গিয়ে যদি রেজিস্ট্রির দিন রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করেন তাহলে আপনাকে একটু কম পয়সা দিতে হবে আর যদি রেজিষ্ট্রার রেজিস্ট্রি বিয়ের দিন আপনার বাড়ি বা আপনার পছন্দ মতো জায়গায় আসেন তাহলে আর একটু বেশি উনি চার্জ করে থাকেন।
৭. এরপর শেষ ট্যাব অর্থাৎ ‘ডিটেলস অফ রেজিস্ট্রেশন এ ‘ যাবেন সমস্ত তথ্য দেবেন।
তলায় থাকা সেভ অ্যাস ড্রাফট বাটন ক্লিক করতে হবে ও প্রিন্ট দিতে হবে। আপনি কিন্তু সাবমিট বাটন এ ক্লিক করবেন না ওটা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার এর কাজ।
এবার এই যে প্রিন্ট টি বের হলো তা নিয়ে আর পাত্র ও পাত্রীর ২ কপি পাসপোর্ট ছবি নিয়ে ৭ দিনের মধ্যে আপনার সিলেক্ট করা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার এর কাছে চলে যান।
সেখানে উনি ওনার সামনে পাত্র ও পাত্রীর আঙুলের ছাপ নেবেন এবং সই করাবেন।
আবেদন করার জন্য আপনি যে যে ডকুমেন্টস গুলি পোর্টালে আপলোড করেছেন, রেজিস্ট্রার ওই ডকুমেন্টস গুলির ফটোকপি অর্থাৎ জেরক্স ও নেবেন।

এই ভাবে খুব সহজেই রেজিস্ট্রি করার প্রথম প্রক্রিয়াটি বাড়িতে বসেই করে ফেলতে পারবেন।
পাত্র ও পাত্রী ওই প্রিন্ট আউট ও ডকুমেন্টস রেজিস্ট্রার এর কাছে জমা দিয়ে আসার পর রেজিস্ট্রার ওনার তরফ থেকে সমস্ত তথ্য দিয়ে পদ্ধতি সম্পূর্ণ করলেই পাত্র ও পাত্রী উভয়ের ফোন ও ইমেইল এ একটি নোটিশ চলে আসবে যেখানে লেখা থাকবে যে পাত্র ও পাত্রী একে অপরকে বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন।
মেইল আসার সেই দিন থেকে পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে আপনাদের objection পিরিয়ড।যে সময়কালের মধ্যে আপনারা বিয়ে করতে পারবেন না।
(এই objection পিরিয়ডে যারা বিয়ে করতে ইচ্ছুক তাদের নাম ও ঠিকানা সদর রেজিস্ট্রারের অফিসে টাঙ্গানো থাকে যদি তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কারোর objection করার থাকে সেই জন্য। যদি কেউ কোনো objection না করে তবেই ৩০ দিন পরে পাত্র পাত্রীর বিয়ে হতে পারবে।
এই এক মাস পূর্ণ হলে তার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে যে কোনো দিন আপনারা রেজিস্ট্রি বিয়ে করতে পারবেন।
কিন্তু যদি কেউ এই ৬০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি বিয়ে না করেন তাহলে তার আবেদন আর বৈধ থাকবেনা। তখন তাকে আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে।
রেজিস্ট্রি র দিন
ম্যারেজ রেজিস্ট্রার এর অফিসে অথবা আপনার বাড়িতে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ এর দিন রেজিস্ট্রার পাত্র ও পাত্রীর উভয়েরই বাম হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ বায়োমেট্রিক মেশিনের মাধ্যমে নেবে।
বর ও কনের বাড়ি মিলিয়ে মোট তিনজন উইটনেস বা সাক্ষীর প্রয়োজন হয় এবং এই তিনজনের ও বায়োমেট্রিক করতে হবে। এদের পরিচয়পত্র রেজিস্ট্রি বিবাহের কয়েকদিন আগেই রেজিস্ট্রার কে দিয়ে রাখতে হবে।
পাত্র পাত্রী এবং তিনজন সাক্ষীর সকলকেই সই করতে হবে এবং এরপরে রেজিস্ট্রার উভয়কে একটি oath নেওয়াবে যেখানে বর বলবে সে কনেকে আজ এই তারিখ থেকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করলো এবং কনে ও বলবে সে বরকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করলো।
সবশেষে পাত্র পাত্রী ও তিনজন স্বাক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার একটি ছবি তুলবে এবং তবেই আপনার রেজিস্ট্রি বিবাহ আইনত সম্পন্ন হবে।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিম – বিশদে জানুন
স্বাস্থ্য বীমা নিতে হলে কোন কোন বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখবেন?
১৬ টি ব্যক্তিগত অর্থায়নের নীতি যা প্রতিটি বিনিয়োগকারীর জানা উচিত