পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিম – বিশদে জানুন

by

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পি পি এফ স্কিম কি? What is Public Provident Fund Scheme?

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পি পি এফ স্কিম ১৯৬৮ সালে ভারত সরকার শুরু করে যাতে স্বল্প পরিমাণ পুঁজি নিয়েও লোকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে এবং কোনো রকম ঝুঁকি ছাড়া।

বর্তমানে বিনিয়োগের মাধ্যম অগুনতি কিন্তু তা সত্ত্বেও পি পি এফ নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়ার জন্য বিনিয়োগের অন্যতম সেরা মাধ্যম।

এই নিবন্ধে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এর সুবিধা, অসুবিধা, রিটার্ন এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করবো –

একনজরে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড

PPF – Key Information
সুদের হার (Interest Rate)বছরে ৭.১% [7.1% per annum (compounded yearly).]
নূন্যতম বিনিয়োগের আমানত (Minimum Investment Amount)বছরে ৫০০ টাকা (Rs.500)
সর্বাধিক বিনিয়োগের আমানত (Maximum Investment Amount)বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা (Rs 1.5 lakh per annum).
সময়সীমা (Tenure)১৫ বৎসর (15 years)
ঝুঁকির পরিমাণ (Risk Profile)নিশ্চিত ঝুঁকিপূর্ণ রিটার্ন (Offers guaranteed, risk-free returns)
কর ছাড়ের সুবিধা (Tax Benefit)১.৫ লক্ষ টাকা অবধি ছাড় (Up to Rs.1.5 lakh under Section 80C)

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট কে খুলতে পারে ? [Who can open a P.P.F account?]

যে কোনো ভারতে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক পি পি এফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে (NRI বা অনাবাসী ভারতীয় হলে পারবেন না)।

১৮ বৎসর বয়সের উর্দ্ধে যে কোনো ভারতীয় নাগরিক পি পি এফ খুলতে পারে তবে একজন ব্যক্তি একটিই মাত্র অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।

১৮ র কম বয়সীদের জন্য তাদের অভিভাবকরা মাইনর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পি পি এফ এর ক্ষেত্রে কোনো জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না।

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট কোথায় খোলা যায় ?

পোস্ট অফিস, সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকেও পি পি এফ অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট এ কত টাকা জমা করা যায় ?

পি পি এফ অ্যাকাউন্ট এ প্রতি অর্থবর্ষে নূন্যতম ৫০০ টাকা এবং সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করা যায়।

নূন্যতম ৫০০ টাকাও যদি জমা না করেন তবে আপনার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে তবে প্রতি বছরের ওই ৫০০ টাকা এবং তার সাথে বছরপ্রতি ৫০ টাকা ফাইন জমা দিয়ে পুনরায় অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করা যায়।

নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট এর ক্ষেত্রে আপনি টাকা তোলা বা লোনের সুবিধা পাবেন না। আপনি কোনো অথবর্ষে যত টাকা জমা দিতে চান তা আপনি একবারে বা কিস্তিতে জমা করতে পারেন।

টাকার পরিমাণ ৫০ এর গুণিতকে হতে হবে এবং সর্বাধিক ১২ টি কিস্তিতে টাকা দিতে পারেন। ক্যাশ, চেক বা অনলাইন ট্রান্সফার এর মাধ্যমেও টাকা জমা করতে পারেন।

আপনি যদি কোনো মাইনর অ্যাকাউন্ট খুলে থাকেন এবং আপনার নিজেরও পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট থাকে তবে কিন্তু দুটো অ্যাকাউন্ট মিলেই আপনি সর্বাধিক দেড় লক্ষ টাকা জমা করতে পারবেন।

এরকম একেবারেই ভাববেন না যে দুটো অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে আপনি মোট তিন লক্ষ টাকা জমা করতে পারেন।

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এর সময়সীমা: ম্যাচুরিটির জন্য কত বছর টাকা রাখতে হয়?

পি পি এফ এর সময়সীমা হলো ১৫ বছর, আরো ভালো করে বললে ১৫ টি অর্থবর্ষ। অর্থাৎ ১ লা এপ্রিল থেকে পরের বছরের ৩১ শে মার্চ।

আপনি যদি কোনো অর্থবর্ষের আগে বা এই সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খুলে থাকেন তবে সেই কয়েক মাস কিন্তু ১৫ বছরের মধ্যে ধরা হবে না। আপনি পি পি এফ খোলার পরে যে ১ লা এপ্রিল আসবে তখন থেকে ১৫ টি অর্থবর্ষ গণনা হবে।

পি পি এফ এর সুদের হার কত? [PPF interest rate]

বর্তমানে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এর সুদের হার হলো ৭.১%। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা quarterly basis এ এটি নির্ধারণ করা হয়।

প্রতি মাসের ৫ তারিখ ও মাসের শেষ দিনের মধ্যে আপনার অ্যাকাউন্ট এ নূন্যতম যত টাকা থাকে তার ওপরে সুদ পাওয়া যায়। তাই ভালো রিটার্ন পেতে অবশ্যই প্রতি মাসে ৫ তারিখের মধ্যে টাকা জমা করে দিন।

আর সবচেয়ে ভালো হয় আপনি কোনো বছরে মোট যত টাকা জমা করতে চান তা যদি একসাথে ৫ ই এপ্রিলের মধ্যে জমা করে দিতে পারেন।

যদিও এটা সবার পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় তবে অবশ্যই lumpsum ইনভেস্টমেন্ট করুন অর্থবর্ষের শুরুতেই কারণ সেটা সর্বাধিক লাভজনক।

ম্যাচুরিটির পরেও আপনি যদি টাকা না তুলতে চান তাহলে ৫ বছর করে পি পি এফ এর মেয়াদ বাড়িয়ে একে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোনো নূন্যতম অ্যামাউন্ট জমা না করলেও চলবে।

পাবলিক-প্রভিডেন্ট-ফান্ড-স্কিম-

কিভাবে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট খুলবেন?

পি পি এফ অ্যাকাউন্ট অফলাইন বা অনলাইন দুভাবেই খোলা যায় –

অফলাইনে – এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে যেতে হবে এবং পি পি এফ এর অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম সংগ্ৰহ করে তা পূরণ করতে হবে।

এই ফর্মের সাথে আপনাকে দু কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড এবং ইলেকট্রিক বিল বা গ্যাসের বিল জমা দিতে হবে।

এই সমস্ত কিছুর সাথে আপনাকে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ৫০০ টাকাও দিতেও হবে যা পি পি এফ এর নূন্যতম আমানত।

এরপর আপনার পি পি এফ অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে গেলে ব্যাংক বা পোস্ট অফিসটি থেকে পাসবুকটি সংগ্ৰহ করে নিন।

অনলাইনে – এক্ষেত্রে আপনার পোস্ট অফিস বা ব্যাংকে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং অবশ্যই ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং ও চালু থাকতে হবে।

আপনি আপনার user id ও password দিয়ে লগ ইন করবেন এবং পি পি এফ অ্যাকাউন্ট খোলার অপশনটি খুঁজে তাতে ক্লিক করবেন এবং self না minor যেটা খুলতে চান সেটা select করুন।

এরপর সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি পূরণ করবেন এবং প্রারম্ভিক সাবস্ক্রিপশন অ্যামাউন্ট ঠিক করুন।

আপনি অনলাইনে পি পি এফ খুললে auto debit অপশন চালু করতে পারেন যাতে আপনাকে প্রতি মাসে টাকা জমার কথা মনে করতে না হয়। সেক্ষেত্রেও চেষ্টা করুন সেটা ৫ তারিখের মধ্যে রাখতে।

এরপর অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করে OTP ভেরিফাই করলেই আপনার কাজ শেষ। যদি physical পাসবুক না পান তাহলে ব্যাঙ্কে বা পোস্ট অফিসে যোগযোগ করতে পারেন তাছাড়া আপনি অ্যাকাউন্ট এ লগ ইন করে অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট ডাউনলোড করে নিতেই পারেন।

পি পি এফ থেকে লোনের কি সুবিধা পাওয়া যায়?

পি পি এফ অ্যাকাউন্ট আপনি যে বছর খুলছেন তার পরের একটি অর্থবর্ষ অতিক্রান্ত হলে লোন নিতে পারবেন। ধরুন আপনি ২০২৪-২০২৫ এই অর্থবর্ষে পি পি এফ অ্যাকাউন্ট খুললেন তাহলে আপনি ২০২৬-২০২৭ অর্থবর্ষ থেকে লোন নিতে পারবেন।

আপনার প্রথম সাবস্ক্রিপশন এর পর ৫ টি অর্থবর্ষ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

যে অর্থবর্ষে লোনের আবেদন করছেন তার আগের অর্থবর্ষে থাকা শেষ অ্যামাউন্ট এর সর্বাধিক ২৫% ই আপনি লোন পেতে পারেন।

আপনি যদি ২০২৭-২০২৮ অর্থবর্ষে লোনের আবেদন করেন তবে ৩১শে মার্চ ২০২৬ এ আপনার অ্যাকাউন্ট এ যত টাকা ছিল তার ২৫% আপনি লোন নিতে পারেন।

কোনো অর্থবর্ষে একবার ই মাত্র লোন নেওয়া সম্ভব।পূর্বের লোনের টাকা পরিশোধ না করলে নতুন করে লোন নিতে পারবেন না। lumpsum বা installment দুভাবেই লোন পরিশোধ করতে পারেন,

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যদি আপনি প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট লোন নেওয়ার ৩৬ মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেন তবে আপনাকে মাত্র ১% হারে সুদ দিতে হবে কিন্তু যদি ৩৬ মাস পেরিয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনাকে ৬% হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে।

What is ppf withdrawal rule? লোন ছাড়াও আপনি পি পি এফ থেকে premature withdrawal এর মাধ্যমে টাকা তুলতে পারেন। যে বছর অ্যাকাউন্ট খুলছেন তার পরের ৫ টি অর্থবর্ষ সম্পন্ন হলে তবেই এই সুবিধা নিতে পারবেন।

সেই ক্ষেত্রে আপনি যখন টাকা তুলবেন তখন তার চার বছর আগের অর্থবর্ষে বা শেষ অর্থবর্ষে (যেটা কম হবে) আপনার অ্যাকাউন্ট এ যত টাকা ছিল সেই টাকার পরিমাণের সর্বাধিক ৫০% টাকা আপনি তুলতে পারবেন।

ধরুন আপনি ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তাহলে আপনি ২০৩০-২০৩১ অর্থবর্ষে লোনের আবেদন করতে পারবেন এবং তখন ৩১ শে মার্চ ২০২৭ ও ৩১ শে মার্চ ২০৩০ এর এই দুই তারিখের মধ্যে যেটায় আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স এর পরিমাণ কম হবে সেই পরিমাণের ৫০% টাকাই তুলতে পারবেন।

পি পি এফ অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ বছরের আগে বন্ধ করা যায় কি?

অ্যাকাউন্ট খোলার ৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে premature closure এর সুবিধা পাওয়া যায় বিশেষ্ কিছু শর্তে, সেগুলি হলো –

অ্যাকাউন্ট হোল্ডার এর নিজের বা নির্ভরশীল সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য (মাইনর অ্যাকাউন্ট থেকে), অ্যাকাউন্ট হোল্ডার অন্য্ দেশের নাগরিকত্ব নিলে।

অথবা যদি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বা পরিবারের নির্ভরশীল কেউ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে এই অপশন পাওয়া যায়।

এই premature closure এর ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় থেকে প্রাপ্ত সুদের থেকে ১% সুদ কমিয়ে ফাইনাল অ্যামাউন্ট নির্ধারিত করা হবে।

এছাড়া অ্যাকাউন্ট হোল্ডার মারা গেল অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে এবং তার nominee বা বৈধ উত্তরাধিকারী সুদসহ টাকা পাবেন।

পি পি এফ এ করছাড়ের সুবিধা কি? [Tax deductions on PPF account]

যদিও পি পি এফ অ্যাকাউন্ট এ সুদের হার তেমন বেশি নয় তবুও তা ফিক্সড ডিপোজিট এর তুলনায় অনেক বেশি এবং আপনি মূল্যবৃদ্ধিকে হারাতে না পারলেও অন্তত তাল মিলিয়ে টাকাকে সামলাতে পারবেন।

কিন্তু পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট এর সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হলো tax deduction। আপনি কোনো অর্থবর্ষে ১.৫ লক্ষ টাকা ছাড় পেতে পারেন ইনকাম ট্যাক্স আইনের সেকশন ৮০c অনুযায়ী।

আর এটাই পি পি এফ অ্যাকাউন্ট এ কোনো অর্থবর্ষে জমা করা যাওয়া সর্বাধিক টাকার পরিমাণ অর্থাৎ পুরো টাকাটাই আপনি কর ছাড় হিসেবে পেতে পারেন।

এছাড়াও আপনি প্রতি বছর যে পরিমাণ ইন্টারেস্ট পাবেন সেটিও হবে ট্যাক্স ফ্রী এমনকি ১৫ বছর পরে অর্থাৎ ম্যাচুরিটির পরে আপনি পুরো যে টাকাটা পাবেন সেটিও পুরোপুরি করমুক্ত হবে। এই কারণেই পি পি এফ এত কম সুদের হারেও এত গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করি পি পি এফ সংক্রান্ত সমস্ত জরুরি তথ্য তুলে ধরা গেছে এবার নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনার।

CAGR ও XIRR কি? এগুলি কি কাজে লাগে?

টাকার দশটি সূত্র যা আপনার জীবন বদলে দেবে

টাকার ইতিহাস কি? টাকার প্রচলন কিভাবে শুরু হলো?

DMCA.com Protection Status

Spread the love

Leave a Comment

error: Content is protected !!