ফার্মাকো ভিজিল্যান্স কি? কোথায় পড়ানো হয়? কারা পড়তে পারে?

by

ফার্মাকো ভিজিল্যান্স হলো বিজ্ঞানভিত্তিক এমন একটি নজরদারি ব্যবস্থা যেখানে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলি যে ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরী করছে সেগুলির গুণগত মান পরীক্ষা করা হয় এবং বাজারে ওষুধ বিক্রি চালু হলে রোগীরা তার থেকে সত্যি উপকৃত হচ্ছে কিনা তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হয় এবং নির্দিষ্ট ওষুধের মানব শরীরে দীর্ঘকালীন প্রয়োগের ফলে কি কি পরিবর্তন ঘটাচ্ছে বা কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী করছে কিনা এগুলি পরীক্ষা করা হয়।

সারা পৃথিবীতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রথম উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো ‘ওষুধ’ যার উপরে ভিত্তি করে পুরো স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দাঁড়িয়ে  আছে। যত দিন যাচ্ছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে আর সেগুলিকে সামাল দিতে বিভিন্ন নিত্যনতুন ওষুধের প্রয়োজন অনস্বীকার্য হয়ে উঠছে । 

কিন্তু যে কোনো ক্ষেত্রকে যদি নজরদারির অধীনে রাখা না হয় তাহলে কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী/ লোক অতি অবশ্যই শুধু মাত্র মুনাফার লোভে তাৎক্ষণিক লাভের জন্য মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতেও মোটেই পিছপা হবে না আর স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রও এই ঝুঁকির বাইরে তো নয়ই বরং এটা এমন একটি বিভাগ যেখানে মানুষের ইমোশন নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করার সুযোগ আছে তাই একটু ফাঁস আলগা হলেই বিপদ।

তার উপর আমাদের মত দেশে যেখানে জনসংখ্যার বিপুল চাপ অনেকে ক্ষেত্রেই আমাদের যেকোনো কাজের সুফল পেতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সেখানে এই জনসংখ্যাই সারা পৃথিবীর কাছে ভারতকে এক বিশাল বাজারে পরিণত করেছে, এখানের মার্কেট ধরতে পারলেই প্রচুর মুনাফা। আর খুব তাড়াতাড়ি শুধুমাত্র এই মুনাফা লাভের কাজ করতে গেলে বিপদ তো আছেই কারণ এটা মানুষের স্বাস্থ্যর সাথে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত।

সুতরাং দরকার সঠিক ও ক্রমাগত নজরদারি যেখানে দেখা হয় যে সত্যি যে সব ওষুধ যা বাজারে আসছে বা আসতে চলেছে বা ইতিমধ্যেই চলছে তা সত্যি কতটা কার্যকরী, সেগুলি এক রোগ সারাতে গিয়ে অন্য রোগ বাধায় না তো? এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর খোঁজা, তার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা ও ক্ষতিকারক ওষুধ গুলিকে বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া।  

ফার্মাকো ভিজিল্যান্স কি

শুধু যে অসাধু ব্যাবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করাই এর একমাত্র উদ্দেশ্য এমন মোটেই নয়। ফার্মাকোভিজিল্যান্সের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তা হলো  – যেকোনো ওষুধ তৈরির সময়ই (তখন ওষুধটি বাজারে সাধারণ মানুষের কেনার জন্য আসেনি, ল্যাবরেটরিতেই টেস্ট হয় ) ওষুধটি মানুষের শরীরে কিভাবে ঠিক কাজ করে তা দেখার জন্য কিছু সংখ্যক লোকের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়, একে বলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, আর সত্যিই এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বেশ অনেকবারই করা হয় এটা দেখার জন্য যে ওষুধটি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখাচ্ছে কিনা।এই ট্রায়াল এ পাস্ করলে তবেই সরকার ওষুধটি বাজারে আসার ছাড়পত্র দেয়।

সব ক্ষেত্রে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রক্রিয়াটি কিন্তু বেশ অনেক বছরের জন্য করা হয় না , কিছুদিন, কিছু মাসের জন্য হয়তো করা হয়। 

তাতে আপেক্ষিকভাবে স্বল্পকালীন কি প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে তা জানা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা সত্যি কি প্রভাব ফেলছে শরীরে তা জানার একমাত্র উপায় যখন ওষুধটি বাজারে আসে এবং বহু লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন বয়সের , বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষের উপর বেশ অনেকটা সময়ের জন্য এটা প্রয়োগ হয় তখন সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সত্যি ওষুধটির কার্যকারিতার পরীক্ষা করা সাথে তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এর কুফল সম্পর্কেও অবগত হতে হয় , সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হয় যে ওষুধটি বাজারে থাকবে নাকি বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে। তাই ফার্মাকোভিজিল্যান্সের দক্ষ কর্মীর চাহিদাও ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। 

(মাঝে মাঝে দেখা যায় খবরের কাগজের মারফতে সরকার জানায় যে “এই এই ওষুধ গুলোকে বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করা হলো ” – তার কারণ হলো ফার্মাকোভিজিল্যান্স বিভাগ পরীক্ষা করে দেখেছে ওষুধগুলি যত উপকার করে তার থেকে বেশি অপকার করে, এটাই হলো এই বিজ্ঞানভিত্তিক নজরদারির সুফল )

তাই এমন  পেশাদার কর্মীর আমাদের দেশে খুব দরকার যারা বাজারে চলতি ওষুধের গুণগত মান সম্পর্কে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারবে। আর  শুধু আমাদের দেশে নয় সারা বিশ্বেই এই বিভাগে কর্মীর চাহিদা আছে। 

পূর্ব ভারতে একমাত্র ফার্মাকোভিজিল্যান্স ইন ক্লিনিকাল রিসার্চ এর সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও আমরি হসপিটালের যৌথ উদ্যোগে। 

কোর্সের মেয়াদ – ৯ মাসের কোর্স (তার মধ্যে ৩ মাসের প্র্যাকটিকাল ক্লাস)

ক্লাস হয় সপ্তাহে একদিন শনিবার বেলা ১ টা থেকে ৫ টা অবধি। 

আসন সংখ্যা – ২৫ টি। 

কিভাবে ফার্মাকোভিজিল্যান্সের কোর্সে ভর্তি হওয়া যায় ?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলস কাউন্টারে ফর্ম পাওয়া যায় সেই  ফর্মেই আবেদন করতে হবে।  এই শিক্ষাবর্ষে র জন্য  ফর্ম ফিল আপ করে জমা দিয়ে হবে ২৭ এ অক্টোবর ২০২২ এর মধ্যে। 

কোর্স শেষে সফলদের সম্পূর্ণ রূপে সহায়তা করা হয় চাকরি পাবার জন্য। ( তাই কোর্সটি তেমন পড়ুয়াদের জন্যই ভালো যদি কেউ সত্যি এই বিষয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক হন ও নিজের পায়ে দাঁড়াতেই এই কোর্সটি করতে চান, বসে কেন থাকবো যা হোক একটা কোর্স করি মনোভাবাপন্ন হলে এই কোর্স করার দরকার নেই।)

ইচ্ছুক হলে যোগাযোগ করুন – যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় , ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার , বায়ো ইকুইভ্যালেন্স সেন্টার বিল্ডিঙের ৪ তলায়, কলকাতা- ৩২. ফোন নং  – ৯০৮৮৪০১৩৫৪

ফার্মাকো ভিজিল্যান্স এর কোর্স শেষে চাকরির/কাজের  সুযোগ কেমন ?

কোর্স শেষে কাজের সুযোগ দিতেই এই কোর্স করানো হচ্ছে। এই কোর্সএ ডেটা ম্যানেজমেন্ট , ডেটা এনালাইসিস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, ফার্মাকোএপিডেমোলোজি, সেফটি রিপোর্টিং, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, মেডিক্যাল রাইটিং, ড্রাগ ডিসকভারি, গুড ক্লিনিকাল প্র্যাকটিস গাইডেন্স এর মতো সমস্ত বিষয় শেখানো হয়। 

কোর্স শেষে চাকরির সুযোগ আছে সেগুলি হলো – ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, রিসার্চ অর্গানাইজেশন, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও ড্রাগ রেগুলেটরি কোম্পানিগুলিতে। 

কারা পড়তে পারে এই কোর্স ?

বায়োসায়েন্স, ফার্মাসি, নার্সিং বিভাগে এর গ্র্যাজুয়েট যেকোনো পড়ুয়া এই কোর্সের জন্য আবেদন যোগ্য। মেডিকেল বিভাগের স্নাতকরাও এই কোর্স করতে পারেন।  এছাড়াও প্যারামেডিক্যাল এর ডিপ্লোমা কোর্স পাসরাও পড়তে পারেন। 

Certificate course on Pharmacovigilance in Clinical Research

Course Director: Dr S K Todi

Any further information please call 033 66260000 (Extn. 4315)

স্বাস্থ্য পরিষেবায়আসতে চাইলে বিভিন্ন কোর্স সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন –

https://www.amrihospitals.in/courses-in-amri-dhakuria

আর ফার্মাকো ভিজিল্যান্স এর বিষয়ে আরো জানতে এই ওয়েবসাইট টি দেখতে পারেন –

https://globalpharmacovigilance.com/pharmacovigilance-process/

সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি ?

উচ্চমাধ্যমিকের পরে মেডিক্যাল কোন কোন স্ট্রীমে পড়া যায় ?

DMCA.com Protection Status

Spread the love

Leave a Comment

error: Content is protected !!