তোমরা সকলেই হয়তো জানো যে উচ্চমাধ্যমিকের পর ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং (যেগুলি আমরা বিটেক বা বিই নামে চিনি) পড়তে গেলে WBJEE অর্থাৎ ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সামিনেশন বা JEE Main পরীক্ষায় বসতে হবে।
তাতে পাস্ করার সাথে সাথে ভালো রাঙ্ক করতে হবে তবেই গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গভর্নমেন্ট ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় খুবই কম তাই প্রতিযোগিতা আকাশছোঁয়া এবং পড়ার সুযোগও সাধারণদের জন্য অনেক সময় সাধ্যের বাইরে হয়ে যায়।
আর প্রাইভেট কলেজে ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ ও যথেষ্ট বেশী যার ব্যায়ভার বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই এই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সাধ ও সাধ্যের মেলবন্ধনের একটি উপায় হলো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা যথেষ্ট ভালো তাই একটু ভালো করে পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিলেই আশা করা যায় যে সে গভর্নমেন্ট কলেজে পড়তে পারবে নামমাত্র খরচে।
যদিও এই ডিপ্লোমা পড়ার জন্যও জয়েন্ট পরীক্ষায় বসতে হয় যার নাম JEXPO/জেক্সপো, যদিও এই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের মান ডিগ্রী জয়েন্ট পরীক্ষা WBJEE এর তুলনায় অনেক সহজ হয় কারণ মাধ্যমিক পাস্ যোগ্যতার যে কেউ এই পরীক্ষায় বসার উপযোগী ।
কাদের পড়া উচিত ডিপ্লোমা পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ?
কার পড়া উচিত আর কার পড়া উচিত নয়, এই প্রশ্নের উত্তর পড়ুয়া ও তার পরিবার ছাড়া আর কারোর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় কারণ সকলের অর্থনৈতিক ও পারিবারিক পরিস্থিতি আলাদা, তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া দ্বিতীয় কারোর যোগ্যতা নেই এই উচিত বা অনুচিতের মাপকাঠি নির্ণয় করা।
তাই এখানে শুধুমাত্র আলোচনা করা হলো যে কাদের জন্য এই স্ট্রীমে পড়াশোনা করা লাভজনক হতে পারে ও তা কিভাবে ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং আগামীতে এই ডিপ্লোমা পড়ুয়ার জন্য কতটা ফলদায়ক প্রমাণিত হয়।
পলিটেকনিক কারা পড়তে পারে ? বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা কি ?
মাধ্যমিক পাস্ যেকোনো ছাত্রছাত্রী JEXPO নামের প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় বসতে পারে, ওই পরীক্ষার ফলাফল যদি ভালো হয় তাহলে সামনের দিকে রাঙ্ক হবে আর খারাপ হলে পিছনের দিকে, যত পিছনের দিকে রাঙ্ক তার গভর্নমেন্ট কলেজে পড়ার চান্স বা সুযোগ তত কমবে।
বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিকের পরই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসে, যদিও সংখ্যায় কম হলেও কিছু মাধ্যমিক পাশ ছাত্রছাত্রীরাও পড়তে আসে।
কারা ভাববে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে কিনা ?
যারা সায়েন্স পড়তে আগ্রহী কিন্তু সাথে খুব তাড়াতাড়ি নিজের পায়ে দাঁড়ানোটাও একান্তই প্রয়োজন, গভর্নমেন্ট এ ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার মতো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয় ( তা অর্থনৈতিক কারণে হোক বা মেধার কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণে ) কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়, তাদের জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ভালো অপশন হতে পারে।
কেন ভালো অপশন? প্রচুর টাকা রোজগার করা যায় ?
উচ্চমাধ্যমিকের পর জেনারেল ডিগ্রী কোর্স (BA/BSC/BCOM) পড়লে ৪ বছর সময় লাগবে তা সম্পূর্ণ হতে, কিন্তু যদি তার পর মাস্টার্স বা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ না থাকে বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মাস্টার্স করার অনুকূলে না থাকে তখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য রোজগার শুরু তো করতেই হবে।
কিন্তু আমাদের জেনারেল কলেজগুলিতে এখনো পর্যন্ত পড়াশোনার সিলেবাস ও কারীকুলামের সিংহভাগ ই থিওরিটিক্যাল অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রি কাজের জন্য যে ধরণের লেবার ওয়ার্কফোর্স খোঁজে, তার জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন হয় তা আমাদের এই ৩ বছরের পড়াশোনা পড়ুয়াদের মধ্যে তৈরী করতে সক্ষম নয়।
এখন এই ব্লগ পরে প্রশ্ন হতেই পারে তাহলে কি জেনারেল পড়াশোনার সিলেবাস ভুল ?
না ভুল নয়, কিন্তু অনার্স এর ক্ষেত্রে যে সিলেবাস পড়ানো হয় তা উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থাৎ পরবর্তীতে যারা মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে ইচ্ছুক বা শিক্ষকতার পেশাতে যুক্ত হতে চান তাদের তৈরী করার জন্য, মোটেই ইন্ডাস্ট্রি রেডি ওয়ার্কফোর্স বানানোর জন্য নয়।
তাই বেশিভাগ কর্পোরেটই গ্র্যাজুয়েশনের ডিগ্ৰীর কোনো মূল্য দেয়না কারণ সেই ডিগ্ৰী হোল্ডারদের কাজের দক্ষতা নেই যদিও তারা ভালো স্টুডেন্ট, আর দক্ষতা না থাকলে কোম্পানি কেন বেতন দিয়ে লোক রাখবে কারণ কোম্পানিকেও তো প্রফিট করতে হবে।
এমন এমপ্লয়ী রেখে কোম্পানির লাভ কি ‘যে’ কিছু জানেনা ? তাই তারা রিক্রুট ও করে না আর করলেও মাইনে অল্প দেয়। তাই শুধু গ্র্যাজুয়েশনের পর একটা ভালো চাকরি পেতে জুতোর তলা খুলে যাবে।
আর এখানেই ডিপ্লোমার সাফল্য যেমনই হোক না কেন যেহেতু ছেলেমেয়েদের টেকনিক্যাল কাজের উপযুক্ত বানানোর জন্য এই কোর্সের উদ্ভব তাই গ্র্যাজুয়েশন করে যেখানে চাকরি পাওয়া শক্ত সেখানে ডিপ্লোমা করে চাকরির সুযোগ বেশী।
( যদিও এমন ভাববার একদমই দরকার নেই যে ডিপ্লোমা পাস্ মানেই সে ইন্ডাস্ট্রি রেডি, তা একদমই নয় বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম দিকে অল্প মাইনের চাকরিই করতে হয় তারপর অভিজ্ঞতা বাড়লে মাইনেও বাড়বে )
কিন্তু তাও ডিপ্লোমা পাস্ করার পর ছোট বড়ো চাকরির সুযোগ ভালোই আছে, এরপর আস্তে আস্তে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়াতে থাকলে জীবনধারণের উপযোগী একটা জায়গায় অন্তত পৌঁছানো যাবে।
কারণ বেশিরভাগ টেকনিক্যাল কাজই তো বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, কলকারখানা, পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত তাই সেখানে কাজের জন্য পেশাদার ছেলেমেয়ের প্রয়োজনও যথেষ্ট ভালো।
ডিপ্লোমা করে কত টাকা মাইনের চাকরি পাওয়া যায়?
ডিপ্লোমা পাস্ করে ফ্রেশার্স হিসেবে প্রচুর ভালো বেতনের চাকরির আশা না করাই ভালো। যদি ভাবো স্টার্টিং এই সকলে ৩০ হাজার টাকার চাকরি পাবে, তাহলে সে গুড়ে বালি। তা মোটেই পাবেনা।
আগেই বলেছি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারিং তত্ত্বগত ভাবে টেকনিক্যাল পড়াশোনা হলেও সেখানে টেকনিক্যাল জ্ঞান বেশিরভাগ থিওরির মাধ্যমেই দেওয়া হয় ( এরকম একদমই নয় যে থিওরির প্রয়োজন নেই, থিওরির প্রয়োজন ও আছে )
তাই ইন্ডাস্ট্রিতে হাতে কলমে কিভাবে কাজ হয় তার সম্পর্কে সম্যক ধারণা পড়ুয়াদের থাকে না, সেই সম্যক ধারণা কাজ করতে করতে অর্জন করলে তখনই মাইনে আসতে আসতে বাড়তে থাকবে।
প্রথমে হয়তো ১০,০০০ টাকার মাইনের চাকরিই ১-২ বছর করতে হবে। অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজের দক্ষতা কর্মক্ষেত্রে প্রমান করতে পারলে/ কোম্পানি বদলে অন্য কোম্পানিতে সেই অভিজ্ঞতার নমুনা দেখাতে পারলে মাইনেও বাড়বে।
ডিপ্লোমা করার পর কেরিয়ার তৈরিতে কি সুবিধা পাওয়া যাবে ?
ধরা যাক একটি ছেলে বা মেয়ের অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই যে সে ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারে বা পড়ার জন্য প্রস্তুতির যে সব কোচিং ইনস্টিটিউট আছে সেগুলিতে ভর্তি হয়ে প্রস্তুত হতে পারে জয়েন্ট এর জন্য।কিন্তু তার ইচ্ছে আছে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার।
তখন সে ডিপ্লোমা পড়তেই পারে যদি JEXPO তে ভালো রাঙ্ক করতে পারে। ডিপ্লোমা পাস্ করার পর বা পড়তে পড়তে ল্যাটেরাল এন্ট্রি দিয়ে ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার সুযোগ করে নিতে পারে (সাথে যদি ততদিনে পার্ট টাইম কোনো কাজের ব্যবস্থা করে নিতে পারে তাহলে টাকা পয়সার অসুবিধে দূর হবে )
বা, ডিপ্লোমা পড়ার পর কোথাও চাকরি করে টাকা জমিয়ে বা চাকরি করতে করতে প্রাইভেট ও ডিসট্যান্স এ বিটেক করতে পারে।
( যদিও underlined বাক্যটি জালিয়াতি ও আইনি ভাবে তা করা অপরাধ, কারণ ডিসট্যান্স বিটেক এর মান্যতা ভারতে নেই , যদিও তা রমরমিয়ে চলছে আর মান্যতা না থাকার কারণ হলো ‘টেকনিক্যাল এডুকেশন’ – যা হাতে কলমে কাজ না করলে শেখা যায়না, তা রাঁচিতে বসে কলকাতার কলেজ থেকে শিখবে কীভাবে ? আর এই ভাবে পাস্ করা ইঞ্জিনিয়ার দের জ্ঞান ই বা কতটুকু হবে ?
তা সত্ত্বেও বহু ছাত্রছাত্রী ডিপ্লোমা করে বাইরের রাজ্যে চাকরিরত অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু অনামী বেসরকারি কলেজের B Tech কোর্সে ভর্তি হয় এবং একটিও ক্লাস না করে শুধুমাত্র সেমেস্টারগুলি দিয়ে সেখান থেকে রেগুলার কোর্সের সার্টিফিকেট নেয়।
আর এই বেহাল বেসরকারি কলেজগুলির এতটাই দুরবস্থা যে এরাও অর্থের লোভে এই অবৈধ ব্যবস্থাকে অবলীলায় চালিয়ে নিয়ে চলেছে।
ডিপ্লোমা করার পর কি করা যাবে ?
ল্যাটেরাল এন্ট্রি দিয়ে ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে গভর্নমেন্ট কলেজে যদিও সিট খুবই কম, এছাড়াও প্রাইভেট এ পড়তে গেলেও ল্যাটেরাল এন্ট্রির মাধ্যমে তা করা যেতে পারে।
কোনো চাকরি জয়েনও করতে পারে। তারপর অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে মাইনেও বাড়িয়ে নেবে।
ডিপ্লোমা কাদের না করাই ভালো ?
যারা সায়েন্টিস্ট, সরকারি আমলা, অফিসার হতে চায়, মানে এই পেশাগুলির যাদের প্রধান উদ্দেশ্য তাদের ডিপ্লোমা করা সময় নষ্ট । কারণ সায়েন্টিস্ট বাদে বাকি দুই পেশার জন্য প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দিতে হয় আর এখনো পর্যন্ত তার আবেদনের জন্য সর্বনিম্ন যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক হতে হয়, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকের ডিগ্ৰী নয়, তাই উপরোক্ত পেশায় যুক্ত হতে চাইলে জেনারেল স্ট্রিমেই এই গ্র্যাজুয়েশন করা ভালো।
এই ব্লগের উদ্দেশ্য হলো সাধারণত সাধারণ মানুষে যেসব স্ট্রীম গুলি পলিটেকনিকে পড়ানো হয় বলে জানে আর অন্য কিছু না দেখে প্রচুর ছেলে মেয়ে একসাথে চায় ওই গতে বাঁধা স্ট্রিমই পড়তে( যেমন সিভিল, মেকানিক্যাল , ইলেকট্রিকাল , টেলিকম্যুনিকেশন ) তাদের অন্যান্য বিভিন্ন পলিটেকনিক স্ট্রীম সম্পর্কে অবগত করা যাতে পড়ুয়ারা ও তাদের অভিভাবকরা অন্তত ভাবার সুযোগ পায় যে সত্যি কি চিরাচরিত স্ট্রিম গুলিই একমাত্র পড়ার মতো ? নাকি অন্য আরও যে স্ট্রিম গুলি আছে সেগুলিও পড়া যায়।
কারণ কোনো স্পেশাল দিকে যদি একসাথে সবাই ছুটে যায় তাহলে সেখানে সাফল্য লাভের জন্য প্রতিযোগিতা মারাত্মক বেড়ে যায় আর টিকে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সত্যি সমস্ত মডার্ন টেকনিক্যাল ফিল্ডে পেশাদার কর্মীর চাহিদা প্রবল অথচ এখনও অবধি আমরা মান্ধাতার আমলের চিন্তাধারাকে ত্যাগ করতে পারিনি ও নতুন মডার্ন প্রযুক্তিকে পেশা করার কথা বেশিরভাগ লোকের কাছেই শুনতে অভ্যস্ত নয়, আমরা শুধু বয়োজেষ্ঠ্যদের কাছে শুনি যে “কোর স্ট্রিম ই সবসময় ভালো” আর ব্যাস সিদ্ধান্ত তৈরী !
তারপর গরুর পালের মতো সবাইকে ছুটতে হবে এক ই দিকে। চাকরি পাবেনা বেকারত্ব বাড়বে, ড্রয়িং রুম এ বসে তারা আলোচনা করবে যে “দেশের কি হাল”!
উপসংহার –
মনে রেখো যে জায়গায় সবাই দৌড়াচ্ছে সেখানে তুমি দৌড়াবে কেন বরং এমন রেস এ দৌড়াও যেখানে প্রতিযোগিতা তুলনায় এখনো কম। কিন্তু দৌড়াও প্রাণপণ শক্তি দিয়ে আর মোটেই মাথামোটার মতো নয়, হার্ডওয়ার্কের সাথে স্মার্টওয়ার্ক ও জরুরি।
নতুন কোনো বিষয় নিয়ে পড়তে ইচ্ছে হলে দেখো মার্কেটে তার চাহিদা কেমন, পড়াশোনা করে কি কাজ করা যায়, তাতে মাইনে কেমন ভবিষ্যৎ কেমন সমস্ত কিছু।
যদি এখন তুমি কোনো ১৫-১৯/২০ বছর বয়সী পাঠক হও, তাহলে বলবো লেখাপড়া করো এমন ক্ষেত্রে এমন ভাবে যাতে অর্থনৈতিক ভাবে তোমার পড়াশোনা তোমাকে আর্থিক সুখ দেয়, কারণ অর্থ ছাড়া সব কিছু বেকার, আবার অর্থই একমাত্র প্রয়োজন নয়।
আগে অর্থ উপার্জন করতে হবেই, আর অন্য কারোর জন্য ( সমাজেরই হোক বা ব্যাক্তি বিশেষের) নিজের স্বপ্নর সাথে কখনো আপোষ করবে না, যদি দেখো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তোমার স্বপ্নের সাথে সাথ দিচ্ছেনা তাহলে যেকোনো কাজ করতে শুরু করো, নিজে উপার্জন করো, সাথে পড়াশোনা হোক বা তোমার স্বপ্নের কাজ তা চালিয়ে যাও।
আর অবশ্যই এমন মানুষের কথায় প্রভাবিত হবেনা যাদের সাথে তোমার অর্থনৈতিক অবস্থার মিল নেই, তার কারণ যে ছেলে মেয়ের পারিবারিক রোজগার ৫০, ০০০ টাকা তার ও তার বাবা মায়ের জীবন যাত্রা, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হবে আর যাদের ১০,০০০ টাকা তাদের লড়াইটা অন্য।
একজন কলেজ শিক্ষক যে ১ লক্ষ টাকা মাইনে পায় সে বলতেই পারে “ডিপ্লোমা খারাপ, ও আবার কেউ পড়ে নাকি ?” কিন্তু তা শুনে তুমি হতাশ হবেনা।
মনে রাখো অর্থ মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি আলাদা করে দেয়। তাই নিজে সবকিছু বিচার করে তবে সিদ্ধান্ত নেবে। দরকার হলে সমসাময়িক কোনো দাদা দিদির অভিজ্ঞতার সাহায্য নিতে পারো যদি তারা বিশ্বস্ত হয়, বাড়িয়ে বা কমিয়ে বলার প্রবৃত্তি তাদের না থাকে ।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় আর একটা কথাও মাথায় রাখতে হবে, তা হল – তুমি যে ধরণের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইছো বর্তমান পরিস্থিতিতে তার মার্কেট কেমন, যদি তোমার হোম টাউন বা রাজ্যে মার্কেট ভালো না হয় তাহলে বাইরে যেতেই হবে, সেক্ষেত্রে তুমি কত টা প্রস্তুত তা দেখে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
যেমন ধরা যাক আজ থেকে ৩-৪ বছর আগেও ভূগোল বইতে বাচ্চারা পড়তো যে রানীগঞ্জ, আসানসোল, বর্ধমান বেল্টে শুধু কয়লা পাওয়া যায়, পশ্চিমবঙ্গের যা খনি আছে তা প্রায় পশ্চিমদিকেই, তো যদি কেউ মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তার চাকরি এইসব জায়গাতেই হতে পারে আর নাহলে অন্য রাজ্যে যেতেই হবে চাকরির জন্য।
কিন্তু ভেবে দেখো এই সবে বীরভূমের দেউচা পাচামি তে এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা খনি ব্লক আবিষ্কার হয়েছে, এবার কয়লা খনি বানানোর কাজ আরম্ভ হয়েছে এবং এই কয়লা খনি বানানো তার মেইনটেন্যান্স সমস্ত কিছুর জন্য তো পেশাদার ছেলেমেয়ে চাই, তাই যারা মাইনিং পড়ছে বা পড়বে তাদের এখানে কাজের সুযোগ ও হবেই, ঠিক এই একই কথা উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোক নগর তৈল রিসার্ভ এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তাই পড়াশোনা করো এমন স্ট্রিমে যেখানে কাজের সুযোগ বেশি, অথচ লোক কম পড়ে, তাহলে প্রতিযোগিতাও কম। তবে পড়ার আগে এখন ইন্টারনেটের দৌলতে দেখেই নিতে পারো যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ কেমন? এখন কি তারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ করছে ? বিভিন্ন সাইটগুলিতে সার্চ করে দেখো যে তুমি যে স্ট্রিমে পড়বে প্রতি সপ্তাহে সেখানে কতজন এমপ্লয়ার এমপ্লয়ীর খোঁজে অ্যাডভার্টাইসমেন্ট দিচ্ছে।
এইভাবে বর্তমান মার্কেট সম্পর্কে ধারণা করতেই হবে কারণ একবার একটা স্ট্রিমে ঢুকে পড়লে বেরোনো সহজ নয়, এমন নয় যে ৩ বছর পর তুমি আবার অন্য স্ট্রিমে ডিপ্লোমা পড়বে।
জীবন তোমার সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে যে তুমি তাকে কিভাবে গড়ে তুলতে চাও। আশা করছি এই লেখা পরে যারা ডিপ্লোমা পড়বে কিনা ভাবছিলে তারা নিজের অবস্থা বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ কি ? কাদের জন্য ? কত টাকা পাওয়া যায় ?
সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য সেরা কয়েকটি ওয়েবসাইট
সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য জেনারেল স্টাডিস এর দরকারি বইগুলি