এই আর্টিকেলটিতে আমরা বিশদে জানবো কীওয়ার্ড রিসার্চ সম্বন্ধে কিন্তু তার আগে জানা দরকার কীওয়ার্ড (keyword) মানে কি? এর দরকারটা কি?
কীওয়ার্ড কাকে বলে? (What is Keyword?)
একদম এককথায় বললে কীওয়ার্ড হলো সেই সমস্ত শব্দ যা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন [যেমন – গুগল (Google, ইয়াহু (Yahoo), বিং (Bing) ইত্যাদি] গুলিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সার্চ করা হয়।
এবার আসা যাক বিশদ বিবরণে – আজকের দিনে সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন, স্কুলপড়ুয়া হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক কেউ, প্রত্যেকেই সারাদিন ফোনে মুখ গুঁজে থাকে।
আপনিও এই পোস্টটা খুব সম্ভবত আপনার মোবাইলেই পড়ছেন, এখন কথা হচ্ছে সারাদিন লোকে কেন ফোনেই আটকে থাকে?
এর খুব সহজ উত্তর হচ্ছে ইন্টারনেটের সৌজন্যে (আরও ভালো করে বললে প্রধানত Google এর দৌলতে) মোবাইলের মাধ্যমে আপনি যা চান তাই এখন পাওয়া সম্ভব মাত্র একটি সার্চ এ।
নিজের ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে ভাবুন, কিছু জানতে হলে কি করেন আপনি? ধরুন আপনি একটা নতুন ফোন কিনবেন আর আপনার বাজেট হলো ১০,০০০ টাকা।
খুব সহজেই বলা যায় আপনি গুগল এ যাবেন আর সার্চ করবেন smartphones under 10000 বা best mobiles under 10000
এবার যদি আপনি আগে থেকেই মনস্থ করে থাকেন যে কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ফোনই কিনবেন, ধরা যাক আপনি Redmi র ফোন কিনবেন তাহলে হয়তো আপনি সার্চ করবেন Redmi mobiles under 10000
এক্ষেত্রে আপনার সার্চ করা প্রত্যেকটা শব্দই হলো কীওয়ার্ড (Keyword) এবং গোটা বাক্যটিকে একসাথে আমরা Key Phrase বলতে পারি।
আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক –
আপনি কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে জানতে চান সেক্ষেত্রে আপনি তার নাম লিখে সার্চ করবেন।
আপনি কোনো কোম্পানির বিষয়ে জানতে চান তখন আপনি ওই কোম্পানির নাম লিখে সার্চ করবেন।
খেলার স্কোর জানতে হোক বা শেয়ার মার্কেটের হাল জানতে সবক্ষেত্রেই আপনি সার্চ Google এ গিয়েই করেন আর আপনি সার্চ বার এ গিয়ে যা লিখছেন সেগুলিই হলো কীওয়ার্ড।
কীওয়ার্ড রিসার্চ কেন জরুরি? (why is keyword research necessary?)
সমগ্র ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের খুব সাধারণভাবে দুটো ভাগে ভাগ করা যায়
১. Consumer (যারা সারাদিন শুধু নানান জিনিস দেখেই চলেছে)
২. Producer (যারা ইন্টারনেটে লেখা বা ভিডিওর মাধ্যমে তথ্যের যোগান দিয়ে চলেছে)
এই মুহূর্তে আপনি আপনার কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাব এ এই লেখাটা পড়ছেন তাই আপনি এক্ষেত্রে Consumer আর আমি বেশ কিছু সময় ধরে বসে বসে এই লেখাটা লিখেছি তাই আমি Producer
এখন কথা হচ্ছে আপনি যদি Consumer হন বা Consumer হয়েই থাকতে চান তাহলে আপনি এতক্ষন ধরে এই পোস্টটা পড়ে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছেন।
কীওয়ার্ড রিসার্চ কি বা কিভাবে করে তা জানা আপনার জন্য নিষ্প্রয়োজন।
আর যদি আপনি Producer হন অর্থাৎ আপনার নিজস্ব ব্লগ আছে বা আপনি অনলাইনে বিভিন্ন জায়গায় লেখালিখি করেন এবং চান যে তা আরও বেশি লোকের কাছে পৌঁছক বা আপনার নিজস্ব Youtube Channel আছে।
বা এই মুহূর্তে এগুলি না থাকলেও আপনি এর মধ্যে কোনো একটি খুব শীঘ্রই শুরু করতে চলেছেন।
তাহলে আপনি আপনার সময়কে একদম ঠিক কাজে লাগাচ্ছেন, পুরোটা মন দিয়ে পড়তে থাকুন।
কেউ গুগলে কিছু সার্চ করলে Google চায় ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে ভালো উত্তরটা দিতে।
এবার মোবাইলের উদাহরণটা দিয়েই যদি বলি, ধরুন আপনি সার্চ করলেন best mobiles under 10000, এখন 10000 টাকার কম দামের মোবাইল নিয়ে লেখা আছে এরম হয়তো কয়েকশ ব্লগ এবং ওয়েবসাইট আছে।
আর গুগল চাইবে এর মধ্যে যে ব্লগ বা ওয়েবসাইট বা ভিডিও দেখালে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন সেটা প্রথম পাতায় (first page) এ তুলে আনতে।
কারণ বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই প্রথম পাতা থেকেই বিদায় নেয়, দ্বিতীয় পাতার সার্চ রেজাল্ট দেখার মতো ধৈর্য্য দেখায় না।
কিন্তু এই অগুণতি রেজাল্টের মধ্যে গুগল সেরাটা বাছবে কি করে?
এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কীওয়ার্ড (Keyword)
যদিও Google এর প্রথম পাতায় আসার জন্য কীওয়ার্ড ই একমাত্র বিষয় নয় আরও অনেক কিছু আছে কিন্তু কীওয়ার্ড অবশ্যই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ঠিক যে শব্দগুলি ব্যবহারকারী সার্চ করেছে একদম একই শব্দ এবং ওর সাথে সম্পর্কিত (related keywords) শব্দগুলি যদি আপনার পোস্টে বা ভিডিও তে থাকে যেগুলিকে কেন্দ্র (targeted Keywords) করে আপনি কোনো পোস্ট লিখেছেন বা ভিডিও বানিয়েছেন,
অর্থাৎ Google যদি আপনার ব্যবহৃত কীওয়ার্ড আর ব্যবহারকারীর সার্চ বারে লেখা কীওয়ার্ড এর মধ্যে মিল খুঁজে পায় তাহলে আপনার লেখা বা ভিডিও র Google এর প্রথম পাতায় স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
লোকে যা সার্চ করছে বা খুঁজছে যদি আপনি তা না বুঝে কিছু লেখেন বা ভিডিও বানান তাহলে তা কেউ দেখবে না।
তাই কীওয়ার্ড রিসার্চ এত জরুরি বিষয়।
কীওয়ার্ড রিসার্চ এর সুবিধাগুলি কি কি?
১. কীওয়ার্ড রিসার্চ করে আর্টিকেল লিখলে তা বেশি লোকের কাছে পৌঁছবে।
২. আপনার ব্লগে Organic Visitor (গুগল সার্চের মাধ্যমে আসা দর্শক) এর সংখ্যা বাড়বে।
৩. আপনার লেখাগুলি যত বেশি Google এ rank করবে তত আপনার Domain Authority বাড়বে।
৪. আপনার লেখার ইচ্ছা আরো বাড়বে।
৫. সর্বোপরি এই সব কিছুর ফলে আপনার ব্লগ বা Youtube থেকে আয়ের সুযোগ বাড়বে।
কীওয়ার্ড এর প্রকারগুলি কি কি?
এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক কীওয়ার্ডগুলির প্রকারভেদ যাতে আপনিও সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে কোন কীওয়ার্ড নিয়ে কাজ করা আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে।
১. Seasonal কীওয়ার্ড: এই ধরণের কীওয়ার্ড এর সার্চ এর পরিমাণ বছরের কোনো একটা সময়ে প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায় কিন্তু বাদবাকি সারাবছর সার্চ প্রায় হয় ই না।
যেমন – ‘ কাশ্মীরি শাল ’, ‘ভাইফোঁটার উপহার’, ‘শীতের পোশাক’, ‘ best lights/lamps for ‘Diwali’, ‘best gifts for ‘Christmas’, ‘Happy New Year messages’ প্রভৃতি।
এই ধরনের কীওয়ার্ড নিয়ে কাজ করলে কেবলমাত্র সামান্য সময়ের জন্যই লাভ মিলবে।
২. Evergreen কীওয়ার্ড: এগুলো হলো সেই সমস্ত কীওয়ার্ড যেগুলি সারা বছরই প্রচুর পরিমাণে সার্চ করা হয়।
যেমন – সরকারি চাকরির খবর, বিনোদন, রাজনীতি, এবং কম্পিউটার, মোবাইল ও বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস এর ব্যবহার সংক্রান্ত সমস্ত ধরনের প্রশ্ন।
৩. Geo-targeted কীওয়ার্ড: নির্দিষ্ট স্থানের নামসহ যেসব কীওয়ার্ড সার্চ করা হয়ে থাকে। যেমন – ‘top colleges in India’ বা ‘কলকাতার সেরা মিষ্টির দোকান’।
৪. Trending কীওয়ার্ড: এই কীওয়ার্ড গুলি হঠাৎ করে খুব বেশি সার্চ করা হয় এবং তারপরেই উধাও হয়ে যায়। যেমন – কোনো বড়ো খবর, কোনো নতুন জিনিস চালু হওয়া ইত্যাদি।
৫. প্রোডাক্ট ওরিয়েন্টেড কীওয়ার্ড: দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এরম নানা সামগ্রী সংক্রান্ত কীওয়ার্ডগুলি যেমন – জামা, জুতো, ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস, বই প্রভৃতি। এগুলি নিয়ে ব্যবসা করা লাভজনক।
৬. Buyer কীওয়ার্ড: এই কীওয়ার্ডগুলি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি তখনই কেউ সার্চ করে যখন সে কিছু কেনবার জন্য প্রস্তুত থাকে তাই এই ধরণের কীওয়ার্ড নিয়ে কাজ করলে টাকা আয় করা সম্ভব।
যেমন – Laptops under 50000 বা Bluehost Coupon।
এবার আসা যাক গঠনগত দিক থেকে কীওয়ার্ড এর প্রকারগুলিতে –
১. Navigational or Short Tail কীওয়ার্ড – এই ধরণের কীওয়ার্ড ব্যবহার করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো কোনো নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে পৌঁছোনো। যেমন – ssc, gmail sign in বা sbi online banking ইত্যাদি।
Short Tail কীওয়ার্ড এর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী কি উদ্দেশ্যে সার্চ করছে তা বোঝা যায় না কারণ এগুলি অনেকে broad topic cover করে, কিছু এরম শর্ট টেইল কীওয়ার্ড হলো – sports, country, music প্রভৃতি।
২. Informational কীওয়ার্ড or Mid Tail কীওয়ার্ড: এই কীওয়ার্ড গুলি সার্চ করা হয় যখন কেউ কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজে।
যেমন – দ্রুত ওজন কমানোর উপায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়, হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় ইত্যাদি।
মিড টেইল কীওয়ার্ডগুলি সম্পূর্ণ উত্তর দেয়না আবার একদম সংক্ষিপ্ত উত্তর ও দেয়না।
৩. Transactional কীওয়ার্ড or Long Tail কীওয়ার্ড – এই সমস্ত কীওয়ার্ড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সমস্ত কীওয়ার্ড যখন কেউ সার্চ করে তখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায় সে কিছু কেনার জন্যই সার্চ করছে।
যেমন – Amazon প্রাইম Coupon, Cheap Flight Deals, Namecheap Promo Code ইত্যাদি।
সাধারণত Buy, Coupon, Deals, Discount, Promo এইসব শব্দগুলো এই ধরণের কীওয়ার্ড এ থাকেই।
Long Tail Keywords হলো সাধারণ কিছু Buyer কীওয়ার্ডস এর সাথে আরো দু তিনটি শব্দ জুড়ে তৈরী করা কীওয়ার্ডস যাতে নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীকে টার্গেট করা যায়।
যেমন Best Hotels in Goa for holiday, Cheap hosting deals for bloggers প্রভৃতি।
এই ছিল কীওয়ার্ড সংক্রান্ত তথ্য। আশা করি কীওয়ার্ড কি তা ভালোভাবেই বোঝা গেছে।
আপনি যদি ফ্রী তে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি Google Keyword Planner ব্যবহার করতে পারেন, তবে এটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে একটি অ্যাড অ্যাকাউন্ট চালু করতে হবে।
কিন্তু এই মুহূর্তে কিওয়ার্ড রিসার্চ এবং অনলাইন মার্কেটিং এর যাবতীয় কাজ করার সেরা একটি টুল হলো Semrush। যদি আপনি পেইড তুলে ব্যবহার করতে সক্ষম হন তবে এটি অবশ্যই ব্যবহার করুন।
এস ই ও কি ? আপনার ওয়েবসাইটের এস ই ও কিভাবে করবেন ?
ধন্যবাদ আপনাকে কিওয়ার্ড নিয়ে বিস্তারিত লিখার জন্য।
নিবন্ধটি পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ । কিওয়ার্ড সম্পর্কে লেখার জন্য । আমার প্রশ্ন হলো কিওয়ার্ড কিভাবে রিসার্চ করতে হয় । এবং আর্টকেলে সেটি কিভাবে ব্যবহার করে
যে কোনো কীওয়ার্ড রিসার্চ টুলে আপনি যে কীওয়ার্ড ব্যবহার করতে চাইছেন সেটা দিয়ে সার্চ করলে আরো বেশ কিছু related keywords আর তার সাথে সার্চ volume (মানে কত লোক ওই শব্দ বা বাক্যটি সার্চ করছে), কম্পিটিশন প্রভৃতি এই ধরণের metrics দেখতে পাবেন, আপনি অবশ্যই চাইবেন কম্পিটিশন কম অথচ সার্চ ভলিউম বেশি এরকম কীওয়ার্ড খুঁজতে, আমি বেশ কিছু ফ্রী টুলে কীওয়ার্ড রিসার্চ দেখিয়েছি তবে ভিডিওগুলি হিন্দিতে, যদি হিন্দি বুঝতে পারেন তাহলে দেখতে পারেন – https://www.youtube.com/watch?v=6zdNQ1XBljw&list=PLXU3avo5izQMpoIFpPKm9vsdU5hs0XHMa
এবার কথা হচ্ছে আর্টিকেলে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, আর্টিকেলে সঠিকভাবে কীওয়ার্ড ব্যবহার করার পদ্ধতি হলো On-Page SEO এর অংশ, আপনি গুগলে এই সম্বন্ধিত বহু আর্টিকেল পেয়ে যাবেন, তাও সংক্ষেপে বলছি,
১. আপনার Title বা Headings এ কীওয়ার্ড টি থাকতে হবে
২. আর্টিকেলের প্রথম ১০% ও শেষ অংশে থাকতে হবে
৩. Sub-Headings এ যেন keyword থাকে
৪. ছবির Alt-text এ যেন কীওয়ার্ডটি থাকে
৫. ওই কীওয়ার্ড এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্যান্য শব্দ ব্যবহার করুন
৬. এছাড়াও সমগ্র নিবন্ধে যেন ওই কীওয়ার্ডটি থাকে তবে সেটা যেন স্বাভাবিক হয়, জোরপূর্বক সব লাইনে কীওয়ার্ডটি জুড়ে দেবেন না তাহলে সেটা কীওয়ার্ড stuffing হয়ে যাবে।