এস ই ও কি? এস ই ও কিভাবে করবেন ?

by

এস ই ও কি বা এস ই ও কাকে বলে ?

এস ই ও (SEO) এর পুরো কথা হলো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন। ইন্টারনেটে তথ্যের প্রাচুর্য্য এবং যে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য আমরা যে সার্চ ইঞ্জিন মূলত ব্যবহার করি তা হলো গুগল (Google)।

এছাড়াও বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন আছে যেমন Bing, ইয়াহু প্রভৃতি বা ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউব। যদিও এই নিবন্ধে আমরা গুগল এর এস ই ও র কথাই আলোচনা করব।

যখনই আমরা সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু সার্চ করি তখন সেই সার্চ ইঞ্জিন চায় সবচেয়ে ভালো উত্তরটা তার ব্যবহারকারীকে সবচেয়ে কম সময়ে পৌঁছে দিতে।

কিন্তু এই অজস্র তথ্যের মধ্যে থেকে কোনটা কোন ব্যবহারকারীর জন্য সঠিক হবে তা বেছে নেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়, এই সঠিক তথ্য বেছে নেওয়ার জন্য সার্চ ইঞ্জিন যে পদ্ধতি কাজে লাগায় তাকেই বলে এস ই ও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন

এস ই ও সম্পর্কে আপনার তখনই জানা দরকার যদি আপনি ইন্টারনেটে কনটেন্ট ক্রিয়েট করেন অর্থাৎ বিষয়বস্তু তৈরি করেন তা লিখিত, অডিও বা ভিডিও যে মাধ্যমেই হোক না কেন।

কারণ আপনি যে মাধ্যম ব্যবহার করেই কনটেন্ট তৈরি করুন না কেন যদি তা দর্শকদের কাছে অর্থাৎ যাদের জন্য আপনি বানাচ্ছেন তাদের কাছেই না পৌঁছয় তাহলে কোনো লাভ নেই।

আর তাদের কাছে আপনার কনটেন্ট তখনই পৌঁছবে যদি আপনি গুগল এর প্রথম পাতায় আসতে পারেন।

কারণ মানুষ প্রচন্ড অধৈর্য্য আর ৯৯% ব্যবহারকারীই কোনো কিছু খোঁজার সময় গুগল এর প্রথম পাতা থেকেই বিদায় নেয়, দ্বিতীয় পাতায় খুব সামান্য লোকেই পৌঁছয় আর প্রথম পাতাতেও বেশিরভাগ লোক প্রথম তিন চারটে রেজাল্টের মধ্যেই তাদের উত্তর পেয়ে যায়।

তাই আপনিও প্রথম পাতায় বিশেষত প্রথম তিনটে রেজাল্টের মধ্যে নিজের কনটেন্টকে আনতে চাইলে আপনাকে সঠিকভাবে এস ই করতে হবে।

পদ্ধতি অনুযায়ী এস ই ও কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন – হোয়াইট হ্যাট এস ই ও (White Hat SEO), গ্রে হ্যাট এস ই ও (Grey Hat SEO), ও ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও (Black Hat SEO), এছাড়াও আপনার ওয়েবসাইট বা কার্য্যক্ষেত্র অনুযায়ী ই-কমার্স এস ই ও, লোকাল এস ই ও ইত্যাদি।

এস ই ও কত প্রকার? এস ই ও কিভাবে করবেন?

কিন্তু কোনো লিখিত কনটেন্ট এর এস ই ও করার যে তিনটি প্রধান পদ্ধতি তা এবার আমরা জেনে নেব।

অন পেজ এস ই ও (On-Page SEO) –

অন পেজ এস ই ও র সম্পূর্ণটাই আপনার হাতে তাই এটা আপনি অবশ্যই সঠিকভাবে করবেন

যখনই আপনি কোনো আর্টিকেল লেখেন তখন আপনি সবার আগে কীওয়ার্ড রিসার্চ করেন, অন পেজ এস ই ও করার জন্য

  • আপনার মুখ্য কীওয়ার্ড (primary keyword), যেন টাইটেল (H১ ট্যাগ) এ থাকে।
  • ওই কীওয়ার্ড আপনার সাব হেডিং (H২/H৩), ইউআরএল (URL) ও মেটা ডেসক্রিপশন এ থাকে।
  • বিভিন্ন রিলেটেড কীওয়ার্ড বা LSI কীওয়ার্ডও সাব হেডিংস গুলিতে ব্যবহার করুন।
  • আপনার মুখ্য কীওয়ার্ড যেন লেখার প্রথম ১০% এর মধ্যে অন্তত একবার থাকে অর্থাৎ যদি আপনি কোনো ১০০০ টি শব্দের নিবন্ধ লেখেন তার প্রথম ১০০ শব্দের মধ্যে একবার অন্তত আপনার মুখ্য কীওয়ার্ডটি ব্যবহার করুন।
  • সমগ্র লেখা জুড়েই আপনার মুখ্য ও সম্পর্কিত কীওয়ার্ড গুলি ব্যবহার করুন কিন্তু তা যেন স্বাভাবিক হয়, অর্থাৎ জোর করে অনাবশ্যক ভাবে কীওয়ার্ড ব্যবহারের চেষ্টা করবেন না।
  • কীওয়ার্ড ডেনসিটি ১-২% এর মধ্যে রাখাই ভালো তার অতিরিক্ত হলে গুগল সেটা কীওয়ার্ড stuffing বলে মনে করবে যেটা এস ই ও র জন্য ভালো নয়।
  • আপনার সমস্ত ছবিতে Alt-text অবশ্যই দেবেন এবং Alt-text এও কীওয়ার্ড এর ব্যবহার করুন।
  • ভালোভাবে ইন্টারনাল লিঙ্কিং করুন অর্থাৎ আপনার কোনো লেখার সাথে অন্যান্য সম্পর্কিত লেখাগুলিকে লিংক করুন।
  • অবশ্যই অন্যান্য রিসোর্স এর সাথেও আপনার লেখাকে লিংক করুন (এক্সটার্নাল বা outbound লিঙ্কিং)।

অন পেজ এস ই ও করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন দুটি হলো Yoast ও Rankmath, আপনারা যে কোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন।

সুলুকসন্ধানে আমরা Rankmath ই ব্যবহার করি এবং এটিকেই বেশি পছন্দ করি।

টেকনিক্যাল এস ই ও (Technical SEO) –

অন পেজ এস ই ও র মতোই টেকনিক্যাল এস ই ও র ও সবটাই আপনার হাতে তাই একে অবহেলা করবেন না।

টেকনিক্যাল এস ই ও করার জন্য যা যা করবেন –

১. সর্বপ্রথম যেটা দরকার তা হলো আপনার ওয়েবসাইটকে গুগল সার্চ কনসোল (Google Search Console) ও বিং ওয়েবমাস্টার টুল (Bing Webmaster Tools) এর সাথে যুক্ত করুন।

২. সাইটম্যাপ সাবমিট করুন দুটোতেই, যা আপনি Rankmath বা Yoast ব্যবহার করে খুব সহজেই করতে পারেন।

৩. অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটে https ব্যবহার করুন http নয়, কারণ https অনেক বেশি সুরক্ষিত।

৪. আপনার প্রতিটি পোস্টের URL যেন SEO ফ্রেন্ডলি হয়, অর্থাৎ URL সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করুন এবং এতে কোনো নাম্বার, তারিখ এসব ব্যবহার করবেন না।

৫. কখনও যদি আপনি আপনার URL বদলান তাহলে পুরোনো URL টিকে অবশ্যই নতুনটিতে ৩০১ redirect করুন।

৬. আপনার ব্যবহৃত থিম যেন হালকা, রেসপন্সিভ, এবং মোবাইল ফ্রেন্ডলি হয়। এরকম সেরা চারটি থিম হলো – জেনারেটপ্রেস (Generatepress), WP Astra, Kadence ও blocksy।

৭. আপনার ওয়েবসাইটের navigation যেন সঠিক হয় অর্থাৎ আপনার হোমপেজ থেকে যে কোনো পোস্টে ব্যবহারকারী যেন খুব সহজেই পৌঁছতে পারে।

৮. লক্ষ্য রাখবেন আপনার ওয়েবসাইটে ডুপ্লিকেট কনটেন্ট ও কোনো ব্রোকেন লিংক না থাকে।

৯. আপনার ওয়েবসাইটের পেজ লোডিং স্পিড যেন খুব দ্রুত হয়, আর সেটা শুধুমাত্র হোম পেজের ক্ষেত্রে হলে হবে না যেন প্রতিটি পোস্ট বা পেজই খুব কম সময়ে লোড হয়। কারণ ওয়েবসাইট খুলতে দেরি হলে ব্যবহারকারী অপেক্ষা করবে না সে অন্য্ রেজাল্টে চলে যাবে যা গুগল এর চোখে আপনার ওয়েবসাইটকে খারাপ করে তুলবে।

পেজ লোডিং স্পিড বাড়াবার জন্য কি কি করবেন তা নিয়ে পরবর্তীতে অন্য্ নিবন্ধ লিখবো কিন্তু উপায়গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো হোস্টিং নেওয়া যা অনেকেই খরচের জন্য নিতে চাননা, কিন্তু এটা নেওয়া জরুরি।

একদম শুরুর ক্ষেত্রে আপনি Bluehost বা Hostgator দিয়ে শুরু করতেই পারেন কিন্তু যখন আপনি একটু টাকা জমিয়ে ফেলবেন তখন ভালো কোনো ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং নিয়ে নিন।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং হলো – Rocket.net

rocket net managed WordPress hosting
Rocket হোস্টিং

অফ পেজ এস ই ও (Off Page SEO)

টেকনিক্যাল এস ই ও বা অন পেজ এস ই ও র মতো এটা সবটা আপনার হাতে নেই, তাই শুরুর দিকে এই নিয়ে বেশি মাথা ঘামাবার দরকার নেই। আমি তো বলবো অফ পেজ এস ই ও র দিকে তখনই নজর দেওয়া শুরু করুন যখন আপনি অন্তত ১০০টি পোস্ট লিখে ফেলবেন।

অফ পেজ এস ই ও র মূল বিষয় হলো ব্যাকলিংক

ব্যাকলিংক কি?

যখন আপনি আপনার লেখার সাথে অন্য্ কোনো ওয়েবসাইটকে যুক্ত করেন তখন আপনি সেই ওয়েবসাইটকে একটি ব্যাকলিংক দেন, একইভাবে অন্য্ কেউ তার ওয়েবসাইটে আপনার কোনো লেখাকে লিংক করলে আপনি একটি ব্যাকলিংক পান।

গুগল এর চোখে এই ব্যাকলিংক কিছুটা ভোট পাওয়ার মতো কাজ করে, অর্থাৎ আপনি বেশি ব্যাকলিংক পাওয়ার অর্থ অনেকজন আপনার লেখাকে ভোট দিচ্ছে, আর গুগল সেই দেখে মনে করে যে আপনার লেখাটি যথেষ্ট ভালো তাই এর প্রথম পাতায় আসা উচিত।

কিন্তু এক্ষেত্রেও নানারকম অসাধু উপায় মানুষ ব্যবহার করে তাই ব্যাকলিংক এর ক্ষেত্রে গুগল দুই ধরণের ট্যাগ ব্যবহার করে যা হলো – ডু ফলো (Do – Follow) ও নো ফলো (No – Follow), এবং এর মধ্যে Do – follow হলো গুগল এর চোখে বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাকলিংক তৈরি বলতে মূলত Do – Follow লিংক অর্জন করাকেই বোঝায়, কারণ তুলনামূলকভাবে no – follow ব্যাকলিংকের গুরুত্ব অনেক কম, কিন্তু সেটাও কখনই গুরুত্বহীন নয়।

অফ পেজ এস ই ও র প্রত্যেকটি পদ্ধতি নিয়ে এক একটি আলাদা নিবন্ধ লেখা যেতে পারে কিন্তু আপাতত খুব সংক্ষেপে লিখব।

১. গেস্ট পোস্টিং (Guest – Posting) – এটি ডু ফলো ব্যাকলিংক পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী উপায়, আপনি যে নিশ (niche) এর উপর কাজ করছেন সেই সংক্ৰান্ত অন্যান্য ওয়েবসাইটের জন্য গেস্ট পোস্ট লিখুন।

২. ব্রোকেন লিংক বিল্ডিং – আপনার লেখা কোনো আর্টিকেল কাজে লাগবে এরকম ব্রোকেন লিংক খুঁজে বের করুন এবং সেই ওয়েবসাইটের চালনাকারীর সাথে যোগাযোগ করে আপনার লিংকটি যোগ করার অনুরোধ করুন।

এছাড়াও প্রেস রিলিজ, HARO, Skyscraper টেকনিক প্রভৃতি পদ্ধতি আছে অফ পেজ এস ই ও করার যেগুলো সংক্ষেপে বোঝানো সম্ভব নয়।

ব্যাকলিংক পাওয়ার আরো একটি সহজ উপায় হলো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের প্রোফাইল খোলা এবং সেখানে নিজের ওয়েবসাইটের লিংকটি যোগ করে রাখা।

আপনি যদি খুব ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তাহলে এমনিতেই ব্যাকলিংক পাবেন, তার জন্য আলাদা কোনো উপায় খুঁজতে হবে না। তাই সবার আগে ভালো কনটেন্ট তৈরী করুন যা আপনার পাঠকদের কাজে লাগবে এবং টেকনিক্যাল ও অন পেজ এস ই ও সঠিকভাবে করুন।

আশা করি এই নিবন্ধটি পড়ে এস ই ও (SEO) সম্পর্কে একটা সহজ ধারণা পেয়ে গেছেন, কিন্তু এটি এমন একটি বিষয় যা আপনাকে শিখতে থাকতে হবে, আর এটা শেখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজের লেখা নিবন্ধকে rank করানোর প্রচেষ্টা করা, তাই দেরি না করে চেষ্টা শুরু করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি ?

ডোমেইন নেম কাকে বলে ?

ট্রান্সক্রিপশন করে আয় করার সেরা কিছু ওয়েবসাইট

DMCA.com Protection Status

Spread the love

2 thoughts on “এস ই ও কি? এস ই ও কিভাবে করবেন ?”

  1. মোটামুটি পড়িতে পেরেছি এবং বুঝতে ও পেরেছি কিন্তু যখন কাজ করতে যায় তখন কিভাবে করবো আর কোনটা করলে সঠিক হবে সেই আর ঠিকঠাক করতে পারি না, তখন ভুল হয়েছে হয়ে গেছে এ-ই কাজটা সঠিক করার জন্য শেখার জন্য কিভাবে চেষ্টা করবো, আমকে আরও সহজ করে যদি রাস্তা দেখাইতে পারেন, তাহলে আমার ব্লগ সাইট ওয়েব সাইট ঠিক করে নিতে পারতাম, কারণ আমার ব্লগ সাইট ওয়েব সাইট কিভাবে কোথায় আটকে আছে এবং কিসের জন্য অচল রয়েছে তা-ও আমি বুঝি না এবং জানি, ত এ-ই লেখা লেখি পড়ে যেটা বুঝতে পারছি সেটা করা যাবে, কিন্তু সেটা আমি করতে পারছি না, বিধায় আমার কথা গুলো বিবেচনা করে আমাকে সহজ ভাবে সহায়তা প্রদান করেন।

    Reply
  2. ব্যাকলিংক কি সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছি। আরো প্রশংসনীয় পোস্টের অপেক্ষাই রইলাম।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!