ওজন কমানোর উপায় এবং ওজন কমানোর খাবার

by

বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রা যত গতিশীল হচ্ছে , তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের শারীরিক গতিশীলতা ক্রমাগত কমছে।

আমরা রান্না না করে কেনা খাবার খেতে রোজ অভ্যস্ত হয়েছি , দিনের বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজে অভ্যস্ত হয়েছি, শারীরিক কসরত করতে হয় এমন সব কাজ যেমন দোকান-বাজার করা, গৃহস্থলির বেশিরভাগ কাজ আমরা বাড়িতে বসেই ফোনের মাধ্যমে সহজেই করে ফেলছি, আর এই জীবনধারা সত্যি আমাদের জীবনকে ঝঞ্ঝাটহীন করে তুলেছে।

কিন্তু এই স্থবির জীবনযাত্রা অজান্তেই আস্তে আস্তে ওজন বাড়াতে শুরু করে, যতক্ষণ না তা চোখে পড়ার মত বেড়ে যায়। আর তখন ই মানুষ পাগলের মতো ওজন কমানোর উপায় খুঁজতে শুরু করে।

কারণ অত্যধিক ওজন সুগার-প্রেশার-কোলেস্টেরল সহ বিভিন্ন অসুখ কে বাসা বাধার সুযোগ করে দেয়। তাই ওজন কে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি।

যদি কেউ এরকম ভাবে যে শুধুমাত্র খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা ওজন কমানোর উপায় বা পন্থা হিসাবে অবলম্বন করবে কিন্তু কোনো শারীরিক পরিশ্রম করবেনা, তাহলে কিন্তু সত্যি কোনো খাবার নিয়ন্ত্রণ করে কাজ হবেনা।

ওজন কমাতে গেলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে , তার সাথে পরিশ্রম ও করতে হবে , এই দুইয়ের মেলবন্ধন ঠিক মত হলে তবেই ওজন কমবে। সেরকমই ওজন কমানোর খাবার তালিকা নিচে আলোচনা করা হল-

ওজন কমানোর খাবার তালিকা-

ওজন-কমানোর-উপায়

ওজন কমানোর জন্য খাবার তালিকা করার আগে বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে যেমন ;-

ব্যক্তির বয়স , লিঙ্গ, সে কিরকম কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত , কোন পরিবেশে বসবাস করে এবং সেই জায়গার অনুযায়ী কি ধরণের খাবার এর প্রাচুর্য্য আছে এবং অতি অবশ্যই ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে খাদ্যাভ্যাসের ও কিছু পরিবর্তন  আনাটাই বাঞ্ছনীয়। 

একজন ৪০ বছরের মানুষের ওজন কমানোর জন্য যে খাবার তালিকা হবে ২০ বছর বয়সী একটি ছেলের ওজন কমানোর তালিকা তার থেকে ভিন্ন হবে কারণ ২ জনের শারীরিক চাহিদা বয়সের বিভিন্নতার কারণেই আলাদা হবে।

আবার একজন মানুষ যে সারাদিন বাইরে বাইরে কাজ করে অর্থাৎ আউটডোর ওয়ার্ক করে তার খাবার তালিকা একজন চেয়ারে বসে ৮ ঘন্টা কাজ করা ব্যক্তির খাবারের তালিকার থেকে আলাদা হবে।

মেয়েদের শারীরিক গঠন ও ছেলেদের শারীরিক গঠন যথেষ্ট আলাদা, কিন্তু তাই বলে যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কম খাবার খেলেই চলবে এমন মোটেই নয়, বরং কিশোরী বয়স থেকেই মেয়েদের খাবারের প্রতি পরিবারকে আরো যত্নশীল হতে হবে কারণ মেন্সট্রুয়াল সাইকেলের কারণেও প্রতি মাসেই বেশ খানিকটা রক্ত তাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, আর ঠিক এই কারণেই আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়ে রক্তাল্পতায় ভোগে। 

এছাড়াও বিভিন্ন ঋতুতে যে শাক সবজি, ফল মূল পাওয়া যায়, সেগুলিও খাবার হিসেবে গ্রহণ করতেই হবে , কারণ পরিবেশ অনুযায়ী প্রকৃতিই আমাদের শরীরের সমস্ত পুষ্টি উপাদান সরবরাহের ভার নিয়ে রেখেছে। 

তাই ওজন কমাতে গিয়ে শরীরের পুষ্টির যেন কোনো ঘাটতি না থাকে তার দিকে ভালো করে লক্ষ্য দিতে হবে। 

এবার দেখা যাক ওজন কমাতে কি কি খাওয়া যেতে পারে –

ওজন কমানোর মূল কথা হলো এমন খাবার খেতে হবে যাতে পেট ভরে, শরীর পুষ্টি পায়, কিন্তু ক্যালোরি বেশি না থাকে।

আমাদের দেশের এরকম কিছু খাবার হলো — 

ডিম্ – ডিম্ ভাজা নয় , বরং ডিম্ সিদ্ধ খান অথবা ডিমের পোচ খেতে পারেন, কিন্তু পোচের ২ টি দিক ই একবার চাটুতে দিয়ে নিয়ে খাওয়াই ভালো কারণ নাহলে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হবার ভয় থাকে।

ডিমে থাকে ভিটামিন – A , ভিটামিন – B , ভিটামিন – D , E , আয়রন থাকে যা শরীরের পুষ্টির জন্য খুব প্রয়োজন। 

স্যালাড – খাবারের সঙ্গে সবসময় স্যালাড রাখুন, টোম্যাটো, শসা, পেঁপে, মূলো, পেঁয়াজ, গাজর, ধনেপাতা, লেটুস পাতা  দিয়ে স্যালাড বানান এবং দুপুর ও রাতে খাবার শেষে স্যালাড খান। এতে বেশিক্ষন পেট ও ভর্তি থাকবে অথচ ক্যালোরি ও বেশি খাওয়া হয়ে যাবেনা।

দই – ওজন কমানোর জন্য অতি অবশ্যই দিনে দুপুরের খাবারের  সাথে এক বাটি দই খান। দই তে থাকে প্রোটিন , ক্যালসিয়াম , ভিটামিন , জিঙ্ক , ফসফরাস , প্রো বায়োটিক্স  ( পেটের গন্ডগোল কমাতে সাহায্য করে ),এর  মতো পুষ্টি উপাদান। দই খেলে ত্বক , চুল ও ভালো থাকে। 

মাছ – ওজন কমাতে গেলে মাছ ও খেতে হবে। মাছ এমন একটি খাদ্য উপাদান যার প্রায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব শরীরে পড়েনা। এটি আমাদের দেহের প্রাণীজ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে এবং সহজ পাচ্য। সামুদ্রিক মাছ যেমন কোড, স্যালমন জাতীয় মাছে প্রচুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা ওজন বাড়তে বাধা দেয়। 

মুরগির মাংস – যদি কেউ মাছ বা ডিম্ না খান তাহলে তাকে প্রাণীজ প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস অবশ্যই খেতে হবে। কিন্তু আনাজ দিয়ে মাংসের স্টু ই খেতে হবে, কষা মাংস খাওয়া চলবেনা। কিন্তু আমাদের মতো গরমের  দেশে রোজ মুরগির মাংস না খাওয়াই ভালো। 

এছাড়াও আপনার দৈনন্দিন খাবারে আর যে যে উপাদান গুলো রাখতে পারেন সেগুলি – ফুলকপি , বাঁধাকপি , সবুজ পাতা যুক্ত শাক , ডাল , অংকুরিত ছোলা , ছাতু ইত্যাদি। 

এর সাথে অতি অবশ্যই প্রচুর জল খেতে হবে।  দিনে অন্তত ২.৫-৩ লিটার জল অতি অবশ্যই পান করতে হবে। 

ওজন কমানোর উপায়/ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়-

ওজন কমাতে কি খাওয়া উচিত? আর কি খাওয়া উচিত নয় তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই কিন্তু খাবার খাওয়ার বিষয়ে  কিছু নিয়ম মেনে চললে ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করলে , হাঁটাহাঁটি করলে ওজন কমতে বাধ্য।  সেরকম ই কয়েকটি নিয়ম হল – 

বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন , ভাজা ভুজি খাওয়া কমিয়ে দিন , ময়দার রুটি/পাউরুটি খাবেন না , দিনে ৪ বার অবশ্যই খেতে হবে, ভাত , রুটি জাতীয় কার্বোহাইড্রেট কম খান। রেড মিট খাবেন না। খাবারের মাঝে অতিরিক্ত গ্যাপ দেবেন না। প্রতিবার খাবারের মাঝে ৩-৪ ঘন্টার বেশি গ্যাপ না থাকাই  ভালো। অতি অবশ্যই ব্রেকফাস্ট করুন। রান্নায় চিনি ও নুন যত সম্ভব কম দিন। 

ওজন কমানোর ঘরোয়া টোটকা-

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

সকালে খালি পেটে গরম জলে মধু ও পাতি লেবুর রস মিশিয়ে খান -/ওজন কমানোর পানীয়

মধু তে থাকে অ্যান্টি -অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন , মিনারেলস। 

লেবু তে আছে ভিটামিন -C .

জলের সাথে এই ২ই উপাদান মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে সব বর্জ পদার্থ দূর হয় , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে , হজম কার্য ও বিপাক কার্য ভালো ভাবে হয়। 

সকালে টক দই খাওয়ার উপকারিতা কি ?

কোনো উপকারিতা নেই।  সকালে খালি পেটে টক দই খাওয়া উচিত নয়। দুপুরে ভাত  বা রুটি খাবার পর ই  টক দই খান , তবেই দই এর পুষ্টি গুন্ শরীর নিতে পারবে। 

দই এর উপকারিতা – দই  উচ্চ রক্ত চাপ কমায় , রক্তে কোলেস্টেরল কে কমাতে পারে, সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তে  ক্যালসিয়াম মাত্রা বাড়ায়।  

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম– সকালে একেবারে খালি পেটে গ্ৰীন টি না খাওয়া ই ভালো। যেকোনো খাবার  খাওয়ার অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর বা আগে গ্রীন টি  পান করা উচিত। 

কোন কোন ফল খেলে ওজন কমে-

আপেল , কমলা লেবু , তরমুজ, পেঁপে, পেয়ারা , আঙ্গুর ও আনারস। 

কোন কোন ফল ওজন কমাতে চাইলে  কম করে খাওয়া ভালো ?

আম, খেঁজুর ইত্যাদি। 

ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট-

ওজন কমানোর উপায় হিসেবে সবাই ডায়েট শব্দটি এখন খুবই উল্লেখ করে কিন্তু ডায়েট মানে কম খাওয়া বা না খেয়ে থাকা নয় , বরং বার বার অল্প অল্প করে নিজের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাওয়া। 

সেরকম ই একজন সুস্থ মানুষের যার কোনো রোগ নেই সে এই ডায়েট চার্ট টি মেনে চলতে পারে –

ব্রেকফাস্ট-

১) চা/কফি /দুধ ( সব চিনি ছাড়া ) সাথে ২/৪ টি বিস্কুট। কিছুক্ষন পর রুটি, একবাটি সবজি ওশশা খেতে পারেন। 

লাঞ্চ –

১) ৬০-৮০ গ্রাম চালের ভাত/ ২-৩ টি রুটি এক বাটি  সবজি , মাছ বা মুরগির মাংসের ঝোল , ডাল একবাটি , ২০০-২৫০ গ্রাম টকদই। 

সন্ধ্যের টিফিন –

চা/কফি /দুধ ( সব চিনি ছাড়া ) সাথে ২/৪ টি বিস্কুট , ছোট বাটির একবাটি মুড়ি বা ওই জাতীয় কিছু । 

নৈশভোজ-

২-৩ টি আটার  রুটি, একবাটি ডাল, এক বাটি  সবজি , শসা ও স্যালাড।  ,

এর সাথে রোজ অন্তত ২ কিমি হাঁটুন , পর্যাপ্ত জল খান ও নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। 

ওজন কমানোর উপায় হিসেবে কোনো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগা হওয়ার ওষুধ খাবেন না, খেলে নিজের বিপদ বাড়াবেন ।  

সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি?

কোলেস্টেরল কি? কোলেস্টেরল কমানোর উপায়গুলি কি কি?

DMCA.com Protection Status

Spread the love

Leave a Comment

error: Content is protected !!