স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড কি? সমস্ত খুঁটিনাটি

by

তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবার পরই প্রতিশ্রুতি মতো পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ শে জুন ২০২১ এ উচ্চশিক্ষা পর্ষদের অধীনে চালু করলেন ” ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড স্কিম “।

অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অর্থের সমস্যা মেটাতেই এই স্কিম চালু হলো। এই স্কিমের অধীনে পড়ুয়াদের সরল সুদে ঋণ দেবে ব্যাঙ্কগুলি যার গ্যারেন্টার হবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকার।

কন্যাশ্রী যেমন একটি অভূতপূর্ব স্কিম যা পশ্চিমবঙ্গের নারী ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সার্বিক সামাজিক উন্নতির জন্য চালু হয়েছিল অনেক বৃহত্তর স্বার্থে, ঠিক তেমন ই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড চালু হলো ছাত্রছাত্রীদের স্বনির্ভর হবার স্বপ্ন দেখাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য।

এবার দেখে নেওয়া যাক স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সমস্ত খুঁটিনাটি।

সূচীপত্র
  1. ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড

ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড

স্কিমের নাম ?

ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড স্কিম

কে/কারা আবেদন করতে পারবে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে?

মাধ্যমিক পাস্ করার পর যে কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড এর আবেদন করতে পারবেন। ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত যেকোনো পড়ুয়া এই স্কিমের অধীনে লোন নিতে পারবে।

এই সমস্ত বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা দপ্তর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত এবং যাচাই করে সম্পাদন করা হবে।

আবেদন করার জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড ওয়েস্ট বেঙ্গল এলিজিবিলিটি বা আবেদন করার জন্য কি যোগ্যতা লাগবে?

বয়স ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং যেদিন পড়ুয়াটি আবেদন করছে সেদিন অবধি সর্বনিম্ন ১০ বছরের জন্য তাকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে।

মাধ্যমিকের পর থেকে উচ্চশিক্ষার পড়াশোনা করার জন্য এই ঋণ পাওয়া যাবে।

এই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড স্কিমের অধীনে কোন কোন বিভাগে পড়াশোনা করা যাবে?

মাধ্যমিকের পর যেকোনো বিভাগে পড়তে চাইলে এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে। উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা, সরকারি ও বেসরকারি যেকোনো কলেজে বিএ , এম এ , বি.এস.সি , এম এস সি , ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিটেক , এমটেক , মেডিক্যাল ,ডক্টরেট , আর্ট , ম্যানেজমেন্ট কোর্স সহ সমস্ত কোর্স যেকোনো ইউনিভার্সিটির অধীনে, দেশের ভিতরে ও দেশের বাইরেও পড়তে গেলে এই কার্ড থেকে লোন পাওয়া যাবে।

এ ছাড়াও যেকোনো প্রফেশনাল কোর্স করতে গেলেও এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে। যদি কেউ সরকারি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার যেমন আইএএস, আইপিএস, আইএফএস, ডব্লিউবিসিএস( WBCS), এসএসসি, পিএসসি এর প্রস্তুতির জন্য কোনো কোচিং নিতে চান তাহলেও এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়াও পড়াশোনা চলাকালীন যাবতীয় খরচ যেমন হোস্টেল খরচ , খাওয়াদাওয়া বাবদ খরচ , বই খাতা কেনা , ল্যাপটপ, কম্পিউটার , মোবাইল কেনা সহ সমস্ত কিছু করা যাবে এই কার্ড ব্যবহার করে।

স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এ কত টাকা অবধি লোন পাওয়া যাবে?

১০ লক্ষ টাকা অবধি লোন পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এই কার্ড থেকে ১০ লক্ষ টাকা অবধি লোন নিয়ে তা পড়াশোনার জন্য খরচ করতে পারবে।

মনে রাখবেন :- ১) বর্তমানে পড়ুয়া যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে বা যে কোর্স করছে শুধুমাত্র তারই খরচের জন্য সে আবেদন করতে পারে। ভবিষ্যতে সে কি পড়বে তা ভেবে সেই টাকা আগে থেকে লোন নেওয়া যাবেনা।

ধরা যাক একজন পড়ুয়া এখন উচ্চমাধ্যমিক স্তরের অর্থাৎ ১১ ও ১২ শ্রেণীর পড়ার জন্য ৫০,০০০ টাকা লোন নেবে। তার ইচ্ছে যে সে উচ্চমাধ্যমিক পাস্ করে বি টেক করবে, আর সেই বি টেক এর খরচ ৪ লক্ষ টাকা।

সেখানে কোনো ভাবেই পড়ুয়া একাদশ – দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীন ভবিষ্যতের বি টেক এর জন্য ৪ লাখ টাকা ঋন নিয়ে রাখতে পারবেনা। বি টেক করার জন্য বি টেক এ ভর্তি হয়ে আবার ঋণের জন্য আলাদা নতুন আবেদন করতে হবে।

স্টুডেন্ট লোন নেবার পর সুদ কত দিতে হবে?

simple interest এ বার্ষিক চার শতাংশ (৪%) হারে সুদ দিতে হবে।

লোন এর জন্য আবেদন কাকে করতে হবে ?

ছাত্রছাত্রীরা নিজেও সরকারের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারে। এছাড়া তার অভিভাবক বা অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে আইনত অভিভাবকরাও আবেদন করতে পারবে।

লোন কোথা থেকে পাওয়া যাবে ?

যেকোনো স্টেট কো -অপারেটিভ ব্যাঙ্ক , কো -অপারেটিভ ব্যাঙ্ক

State Co-operative Banks or Central Co-operative Banks or
District Central Co-operative Banks or any other Public and private sector Banks থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।

যদিও কোন কোন ব্যাঙ্ক থেকে এই ঋণ পাওয়া যাবে তা কিছু সময় অন্তর অন্তর সরকার নোটিশ জারি করে লিস্ট দিয়ে দেবে , সেই অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের এমন ব্যাংকে যেতে হবে যারা ওই লিস্ট এ থাকবে।

স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে লোন নিতে চাইলে ব্যাংকে কি কোনো কাগজপত্র বা জমির দলিল বা কোনো মূল্যবান জিনিস কো ল্যাটেরাল হিসেবে জমা রাখতে হবে?

না, কিছু জমা রাখতে হবেনা। ব্যাঙ্ক কোনো কো ল্যাটেরাল এই স্কিমে দাবি করতে পারবেনা। তাই কিছু জমা রাখার প্রয়োজন নেই। এই বিষয় সরকার ব্যাংকের সাথে বুঝে নেবে।

স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণ কি ভাবে ছাত্রছাত্রীরা পাবে?

যে কেউ বাড়িতে বসে এই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড অ্যাপ্লাই করলেই সে লোন পাবেনা। ছাত্রছাত্রীর মেধা ও যোগ্যতা যাচাই করেই ঋণ দেওয়া হবে।

যে ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করতে চাও সেই ইনস্টিটিউটে নিজের টাকা দিয়ে অ্যাডমিশন ফী দিয়ে আগে ভর্তি হতে হবে।

লোনের জন্য ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে, সেই ভর্তির রিসিপ্ট জমা দিয়ে লোনের জন্য যে আবেদন করলে তা তোমার ইনস্টিটিউটে গিয়ে জমা দিতে হবে বা তাদের গিয়ে জানাতে হবে।

সেই আবেদনপত্র ইনস্টিটিউট পরীক্ষা করে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে পাঠাবে, উচ্চশিক্ষা দপ্তর যোগ্য মনে করলে ব্যাংকের কাছে তোমার আবেদনপত্র পাঠাবে, ব্যাঙ্ক লোন পাবার যোগ্য মনে করলে তবেই লোন দেবে।

ধরা যাক কেউ কোনো ম্যানেজমেন্ট কোর্স করবে ৪ বছরের। মোট খরচ এই ৪ বছরে ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু ভর্তির সময় ধরা যাক ৪০,০০০ টাকা দিতে হবে।

তো সেই ৪০,০০০ টাকা নিজের পকেট থেকে দিয়ে ভর্তি হতে হবে , সেই ভর্তির রিসিপ্ট দিয়ে বাদবাকি ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার লোন পাওয়া যাবে।

ছাত্রছাত্রীরা যদি কোনো ইনস্টিটিউটএ ভর্তি হতে চায় তাহলে সেই ইনস্টিটিউটে পড়ার ফী সরাসরি ইনস্টিটিউটের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।

আর যদি ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের খরচের জন্য থাকা খাওয়া , বই খাতা কেনা বা পড়াশোনা সম্বন্ধীয় কোনো খরচ করতে চায় তাহলে সেই টাকা ছাত্রছাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এ চলে যাবে সেখান থেকে তারা এই কার্ড ব্যবহার করে টাকা-পয়সা তুলে প্রয়োজন মাফিক খরচ করতে পারবে।

স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মার্জিন মানি কত ?

৪ লক্ষ টাকা।

৪ লক্ষ টাকা অবধি লোন নিলে পড়ুয়াদের নিজের থেকে কোনো টাকা দিতে হবে না, পুরো টাকাই ব্যাঙ্ক লোন দেবে।

কিন্তু যদি কোনো কোর্সের কোর্স ফী ৫ লক্ষ টাকা হয় তাহলে কিন্তু ব্যাঙ্ক ওই পুরো ৫ লক্ষ টাকা লোন দেবেনা , তখন ৫ লাখ টাকার ৫% তাকে নিজের পকেট থেকে দিতে হবে, বাদ বাকি টাকা ব্যাঙ্ক লোন হিসেবে দেবে।

অর্থাৎ, কোনো কোর্সের ফী ৫ লক্ষ টাকা। পড়ুয়া ক্রেডিট কার্ডে লোন এর জন্য আবেদন করলো ৫ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্ক তাকে ৫ লক্ষ টাকা দেবেনা। তলায় দেখানো হলো ব্যাঙ্ক কিভাবে আর কত টাকা দেবে –

৫/১০০*৫০০০০০ = ২৫০০০টাকা নিজেকে দিতে হবে। বাদ বাকি ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক লোন দেবে।

লোনের টাকা কিভাবে পড়ুয়ারা খরচ করতে পারবে?

পড়ুয়ারা যে ইনস্টিটিউট বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধীনে পড়াশোনা করছে তাদের যা কোর্স ফী তা সরাসরি ক্রেডিট কার্ড থেকে কেটে ইনস্টিটিউটের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে পড়ুয়ার তরফ থেকে।

মোট লোনের টাকার সর্বোচ্চ ৩০% অবধি ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা আনুসাঙ্গিক বিষয়ে খরচ করতে পারবে। অর্থাৎ বই খাতা, কম্পিউটার, এডুকেশনাল ভ্রমণ ইত্যাদির জন্য খরচ করতে পারবে।

আর মোট লোনের টাকার সর্বোচ্চ ২০ % কোর্স চলাকালীন থাকা খাওয়ার খরচ যেমন হোস্টেল ফী এর জন্য ব্যবহার করতে পারবে।

যদি কেউ ১ লক্ষ টাকার লোন নেয় তাহলে তার ২০% মানে সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা সে থাকার জন্য খরচ করতে পারবে আর ৩০% মানে ৩০০০০ টাকা আনুসাঙ্গিক বিষয়ে খরচ করতে পারবে।

মনে রাখবেন – আপনি যা খরচ করতে চাইবেন তা থাকার জন্য হোক বা আনুসাঙ্গিক কারণে, আপনাকে অনলাইন পোর্টালে সেই খরচ অ্যাপ্রুভ করার জন্য আবেদন করতে হবে এবং ব্যাঙ্ককেও জানাতে হবে।

এই খরচ আপনার ক্রেডিট কার্ড থেকে করতে হলে সেই খরচ sanction করার জন্য খরচের রিসিপ্ট ও জমা দিতে হবে।

কতদিন পর থেকে লোন শোধ করতে হবে?

যেকোনো কোর্স কমপ্লিট করার পর ১ বছর হল রিপেমেন্ট হলিডে বা moratorium এই একবছর সময় দেওয়া হচ্ছে যাতে এই সময়ের মধ্যে সে কোনো কাজ খুঁজে নিতে পারে এবং তারপর উপার্জিত অর্থ থেকে লোন শোধ শুরু করতে পারে।

এই এক বছর সময় সহ কোর্স কমপ্লিট করার পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে লোন শোধ করতে হবে ব্যাংকে। যদি ছাত্রছাত্রীদের বাবা মায়েরা বা অভিভাবক রা চান আগে পরিশোধ করতে তাহলেও পারবেন এবং এই আগে লোন জমা দেবার জন্য ব্যাঙ্ক কোনো চার্জ কাটবেনা।

এই লোন নেবার সময় ছাত্রছাত্রী ও সাথে তার বাবা- মা / আইনি অভিভাবক যে co – borrower হবে সেও কিন্তু ব্যাংকের সাথে লোন নিয়ে তা সঠিক সময় পরিশোধের জন্য চুক্তিবদ্ধ হবে।

অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ যদি পড়ুয়া না করতে পারে তার সেই ঋণ পরিশোধের দায় কিন্তু বাবা -মা কেও একই ভাবে নিতে হবে।

“সরকার গ্যারান্টার” এই কথাটার মানে কোনোভাবেই এটা নয় যে পড়ুয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সরকার তার হয়ে ঋণ পরিশোধ করবে।

যদি সঠিক সময় EMI বা কিস্তি না দিতে পারে কেউ তাহলেও কিন্তু অন্যান্য সব লোনের মতো এই এডুকেশন লোনেও পেনাল্টি চার্জ আলাদা করে ব্যাংকে দিতে হবে , সরকার কখনোই এসব দেবেনা পড়ুয়ার হয়ে।

তাই যারা মেধাবী এবং সত্যি প্রয়োজন তাদেরই লোন নেওয়া উচিত। শুধু শুধু সরকার কম সুদে দিচ্ছে বলে লোনের জন্য আবেদন করলে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়বে। যদিও যে কেউ মোটেই লোন পাবেনা , মেধা ছাড়া।

লোন পরিশোধের পদ্ধতি কি ?

লোন পরিশোধ দুই ভাবে হতে পারে।

১) যদি কেউ পড়াশোনা চলাকালীন তার মাসিক কিস্তি মেটাতে থাকে তার ব্যবস্থাও এই স্কীমে করা আছে। সেক্ষেত্রে ৩% সুদ দিতে হবে গৃহীত ঋণের উপর।

২) যদি কেউ কোর্স শেষ করার পর চাকরি পেয়ে ঋণ শোধ করতে শুরু করতে চায় সেক্ষেত্রে কোর্স বা পড়াশুনো শেষ হবার পর তাকে এক বছর সময় দেওয়া হবে চাকরি খুঁজে পাবার জন্য, এই সময়টাকে বলা হয় “মোরাটোরিয়াম “, এই মোরাটোরিয়াম সময় শেষ হলে তার পর থেকে ১৪ বছর এর মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, এক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট হবে ৪%.

অর্থাৎ কোর্স শেষ হবার পর মোরাটোরিয়াম সমেত ১৫ বছর অবধি মোট সময় পাওয়া যাবে ঋণ পরিশোধের জন্য।

ধরা যাক কেউ একজন ২ বছরের কোর্স করার জন্য ১ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে এই ক্রেডিট কার্ডে লোনের আবেদন করলো ২০২১ সালে ১৫ বছরের জন্য অর্থাৎ লোন শোধ করবে চাকরি পাবার ১৫ বছরের মধ্যে।

এবার পুরো ১ লক্ষ টাকা তো ২ বছরের কোর্স ফী, তাই ব্যাঙ্ক কিন্তু পুরো এক লক্ষ টাকা একসাথে দেবেনা , ধরা যাক প্রথম বছর ব্যাঙ্ক ৬০,০০০ টাকা লোন দিলো ১ লক্ষর মধ্যে।

সেই ৬০,০০০ টাকার লোনের সুদ ১৫ বছরের হিসেবে ১৫ বছরের জন্য ধার্য হবে। আবার পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তার ওই বাদবাকি ৪০,০০০ টাকা আবার ব্যাঙ্ক দিলো।

এই টাকার উপর সুদ সহ কিস্তি কিন্তু ১৫ বছরের জন্য ধার্য হবেনা বরং ১৪ বছরের জন্য ধার্য হবে , কারণ ব্যাঙ্ক আপনাকে ১৪ বছরের জন্য টাকা দিয়েছে।

তার মানে আপনি ঋণের টাকার মোট যত টাকা যে বছর ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে ব্যবহার করবেন তার উপরই সুদ সহ কিস্তি ব্যাঙ্ক ধার্য করবে।

এই হিসেবেই ব্যাঙ্ক কোর্স শেষে লোন পরিশোধ করার সময় কিস্তি বা EMI ধার্য করবে এবং তা ঋন গ্রহীতাকে ব্যাঙ্ককে পরিশোধ করতে হবে।

লোন কি যে কেউ পেতে পারবে নাকি পড়াশোনাতে খুব ভালো হতে হবে ? লোন পাবার মাপকাঠি কি ?

না মোটেই যে কেউ লোন পাবে না। সাধারণ যেকোনো ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক লোন দেবার আগে যে লোন নিতে চাইছে তার cibil স্কোর চেক করে।

যদি আগে থেকেই কোনো মানুষ লোন নিয়ে ঠিকভাবে শোধ না দিয়ে থাকে তাহলে তার এই cibil স্কোর খারাপ হয়।

এই খারাপ cibil স্কোর নিয়ে যদি কেউ দ্বিতীয়বার লোন নেবার জন্য ব্যাংকে যায় তাহলে তাকে ব্যাঙ্ক লোন দিতে চায় না কারণ তার আগে লোন পরিশোধের রেকর্ড খারাপ।

কিন্তু এই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে যারা লোন নেবে তারা তো ছাত্রছাত্রী , তাদের আবার cibil স্কোর আসবে কোথা থেকে ?

সেক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হবে ছাত্রছাত্রীর মেধা। ছাত্রছাত্রীর যদি দেশের বা বিদেশের কোনো নামি ইনস্টিটিউটে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে বা কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ে ভবিষ্যতে চাকরি পেয়ে বা যেকোনো ভাবে উপার্জন করে সেই লোন শোধ করার সামর্থ্য তার থাকে, তবেই ব্যাঙ্ক ছাত্রছাত্রীর রেজাল্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা লোন দেবে কিনা। অর্থাৎ মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাই এই সুযোগ পেতে পারবে।

যে কাউকে লোন দেবার সুযোগ করে দিলে ব্যাঙ্ক উঠে যাবে, পড়াশোনা না করেই লোন নিয়ে সরকারি টাকা নয়ছয় করবে।

এই লোন পেতে গেলে কি ব্যাংকে কোনো ইন্সুরেন্স করতে হবে?

না আলাদা করে কোনো ইন্সুরেন্স করতে হবেনা। ঋণ পাবার আগে নিজে থেকে এসব করার কোনো দরকার নেই। যারা ঋণ পাবে ব্যাঙ্ক তাদের তখনি ইন্সুরেন্স করিয়ে নেবে।

যদিও সেই ইন্সুরেন্সের টাকার প্রিমিয়াম বা মাসিক কিস্তি পড়ুয়াকে দিতে হবেনা সরাসরি। তার ক্রেডিট কার্ড থেকে এই কিস্তি কেটে নেওয়া হবে। যখন সে টাকা পরিশোধ করবে তখন সেই টাকাও শোধ হয়ে যাবে।

কি করে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে? কোন কোন ধাপে পড়ুয়ারা এই লোন পাবে ?

ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড

প্রথমে পড়ুয়াদের wbscc.wb.gov.in এই ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেদের নাম, ঠিকানা, প্রাথমিক তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ওই ওয়েবসাইটেই লগ ইন করে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।

১) সেই আবেদনপত্র নিয়ে গিয়ে যে ইনস্টিটিউটের অধীনে আপনি পড়াশোনা করছেন সেই ইনস্টিটিউটে গিয়ে জমা দেবেন ও জানাবেন।

২) তারপর সেই ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ তা চেক করে তা উচ্চশিক্ষা পর্ষদে পাঠাবে।

৩) সেই আবেদন উচ্চশিক্ষা পর্ষদ খতিয়ে দেখবে যে তাকে লোন দেওয়া হবে কিনা।

৪) তারপর উচ্চশিক্ষা পর্ষদ ব্যাংকে লোন দেবার জন্য বলবে।

৫) ব্যাঙ্ক খতিয়ে দেখবে গ্রহীতা আদৌ লোন দেবার উপযুক্ত কিনা তারপর লোন দেওয়া হবে।

এবার দেখে নেওয়া যাক এই এডুকেশন লোনের আবেদন করার সময় কি কি ডকুমেন্ট নিয়ে আবেদন করতে বসবেন –

১) পড়ুয়া (যে আবেদন করছে তার) রঙিন পাসপোর্ট ছবি ২০-৫০ KB এর মধ্যে সাইজ হতে হবে JPG বা JEPG ফরম্যাটে ।

২) Co – borrower এর (যে আবেদন করছে তার বাড়ির লোক/বাবা/মা/ বা যে হতে চাইবে তার) রঙিন পাসপোর্ট ছবি ২০-৫০KB এর মধ্যে সাইজ হতে হবে JPG বা JEPG ফরম্যাটে ।

৪) Co – borrower এর সই ১০-৫০ KB এর মধ্যে jpg / jepg ফরম্যাটে।

৫) ৫০-৪০০ KB এর মধ্যে পড়ুয়ার আধার কার্ড PDF ফরম্যাটে। যদি আধার কার্ড না থাকে তাহলে পড়ুয়ার মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন কার্ড।

৬) অভিভাবকের অ্যাড্রেস প্রুফ বা ঠিকানার প্রমাণপত্র ৫০-৪০০ KB এর মধ্যে PDF ফরম্যাটে।

৭) পড়ুয়ার প্যান কার্ড ও অভিভাবকের প্যান কার্ড পিডিএফ ফরম্যাটে ৫০-৪০০ KB এর মধ্যে। (যদি না থাকে প্যান কার্ড করে নিতে হবে)।

৮) অ্যাডমিশন যে ইনস্টিটিউটে নিয়েছেন বা পড়ছেন তার অ্যাডমিশন রিসিপ্ট পিডিএফ ফরম্যাটে ৫০-৪০০ KB এর মধ্যে।

৯) যাতে পড়ুয়ার কোর্স ফী দেওয়া আছে এরকম যে কাগজ ইনস্টিটিউট থেকে দিয়েছে তাও পিডিএফ ফরম্যাটে ৫০-৪০০ KB এর মধ্যে আপলোড করতে হবে।

তো আবেদন করার আগে এই ডকুমেন্টগুলি আয়োজন করে ফোন বা কম্পিউটারে, তারপরই আবেদন করতে বসুন, আবেদন প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার জন্য সমস্ত তথ্য এই নিবন্ধে দেওয়া হলো , তাও সরকারি ম্যানুয়ালটি একবার পড়ে নেবার জন্য সরকার দ্বারা প্রকাশিত পিডিএফ ২ টি দেওয়া হল – প্রয়োজনে ডাউনলোড করার জন্য – তলার বাটন এ ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন।

Student Credit Card Scheme FAQ

West Bengal Student Credit Card SchemeBengali

পশ্চিমবঙ্গে ইনকাম, রেসিডেন্সিয়াল, বা ডোমিসাইল সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করবেন কিভাবে?

গ্র্যাজুয়েশনের পর কোন কোন সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা যায়?

উচ্চমাধ্যমিকে আর্টস নিয়ে পড়ার পর কি কি করা যায়?

DMCA.com Protection Status

Spread the love

Leave a Comment

error: Content is protected !!