প্যাসিভ ইনকাম কি? প্যাসিভ ইনকাম এর উপায়গুলি কি কি?

by

প্যাসিভ ইনকাম কি এবং কেন আপনার প্যাসিভ ইনকাম সোর্স তৈরী করা দরকার তা জানার জন্য আমাদের জীবনের কতকগুলি সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একবার দেখে নেওয়া দরকার।

যদিও এই বিষয়গুলি আর্থিক স্বাধীনতার নিবন্ধে আগেই উল্লেখ করেছি তা সত্ত্বেও এখানে আবার একবার তা লিখছি।

যে কোনো মানুষের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – সময় (Time), কোনো কিছু করার শক্তি বা সামর্থ্য (Energy) ও টাকা (Money)।

শৈশব থেকে ছাত্রাবস্থা শেষ হওয়া অবধি আমরা প্রাণশক্তিতে ভরপুর থাকি এবং আমাদের সকলের কাছে অফুরন্ত সময়ও থাকে কিন্তু টাকা থাকে না।

এর পরবর্তী ধাপে উপার্জন করা শুরু হলে আমাদের কাছে টাকা থাকে এবং শক্তি বা সামর্থ্যও যথেষ্ট থাকে কিন্তু তখন নিজের ইচ্ছেয় কাটানোর মতো সময় আর পর্যাপ্ত থাকে না।

আর জীবনের শেষ ধাপে অর্থাৎ অবসরের পর আবারও আমরা অফুরান সময় হাতে পাই আর তখন টাকার সচ্ছলতাও থাকে, কিন্তু থাকে না আর আগের মতো শক্তি বা সামর্থ্য।

তাই আপনি যদি তিনটিকেই একসাথে পেতে চান তাহলে আপনাকে আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। অর্থাৎ, আপনাকে টাকার জন্য নিজের মূল্যবান সময় বিকিয়ে জীবন কাটাতে হবে না।

আপনি নিজের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে, উৎসাহের সাথে নিজের পছন্দমতো কাজ করবেন, নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচবেন টাকার কোনো চিন্তা ছাড়াই।

আর এই আর্থিক স্বাধীনতা পাওয়ার ই অন্যতম উপাদান হলো প্যাসিভ ইনকাম।

এবার আসা যাক ইনকাম এর পদ্ধতির কথায়। ইনকাম এর পদ্ধতি দুই প্রকার – ১. অ্যাকটিভ ইনকাম ও ২. প্যাসিভ ইনকাম

অ্যাকটিভ ইনকাম কি?

আমরা চিরাচরিত ভাবে আয়ের যতরকম উপায়ের কথা জানি তার বেশিরভাগই হলো অ্যাকটিভ ইনকাম। এর অর্থ হলো এই পদ্ধতিতে ইনকাম করার জন্য আপনাকে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকতে হবে এবং আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার আয় বন্ধ হয়ে যাবে।

ধরুন আপনি কোনো ছোটোখাটো ব্যবসা করেন, আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে নিজের দোকান খোলেন, সেখানে খদ্দেররা আসে, কেনাবেচা হয় এবং আপনার টাকা রোজগার হয়, তারপর আপনি রাত্রে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে আসেন।

এবার ধরুন কোনোদিন কোনো কারণে আপনি দোকান খুলতে পারলেন না, বাড়িতেই রয়ে গেলেন তাহলে কি সেইদিন আপনার উপার্জন হবে? অবশ্যই উত্তর হলো না, কারণ খরিদ্দাররা অন্য্ দোকানে চলে যাবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ছাড়া আপনার ইনকাম অসম্ভব তাই এটি অ্যাকটিভ ইনকাম।

এবার ধরুন ব্যবসা নয় আপনি চাকুরিজীবি, আপনি নিয়মিত অফিস যান এবং সেখানে দিনের ৮/১০ ঘন্টা কাটিয়ে মাসের শেষে মাইনে পান। এবার যদি ঠিক করেন যে আপনি অফিস যাবেন না তাহলে কিছুদিনের জন্য হয়তো ছুটি নিতে পারেন, কিন্তু যদি আপনি ঠিক করেন যে একমাস আপনি অফিস ই যাবেন না, তাহলে কি আপনার চাকরি থাকবে? যদি চাকরি কোনোভাবে থাকেও সেক্ষেত্রে ওই একমাসের জন্য কি আপনাকে কেউ মাইনে দিতে চাইবে? আবারো আপনার উত্তর না ই হবে। কারণ এটিও হলো অ্যাকটিভ ইনকাম।

প্যাসিভ ইনকাম কি?

প্যাসিভ ইনকাম হলো ইনকাম এর সেই পদ্ধতি যেখানে আপনার উপস্থিতি ছাড়াও আপনার ইনকাম হতে থাকবে।

অনেকেই ভাবেন প্যাসিভ ইনকাম মানে কোনো কাজ না করেই টাকা আয় করা, এরকমটা একেবারেই নয়, প্যাসিভ ইনকাম হলো সেই উপায় যেখানে আপনি যথেষ্ট পরিশ্রম করে একটি ইনকাম সোর্স তৈরি করবেন যা আপনাকে বছরের পর বছর টাকা দিতে থাকবে কিন্তু তখন আর আপনাকে সেই প্রথমের মতো পরিশ্রম করতে হবে না, কিন্তু সেই ইনকাম সোর্স এর যত্ন অর্থাৎ ম্যানেজমেন্ট এর দিকে অবশ্যই ক্রমাগত নজর রাখতে হবে।

প্যাসিভ ইনকাম এর সোর্স কে একটি ফলদায়ী গাছের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, একটি বীজ থেকে চারাগাছ হয়ে তা বড়ো হতে যথেষ্ট সময় নেয় ততদিন অবধি আপনাকে গাছটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করতে হবে কিন্তু একবার সেই গাছে ফলন শুরু হলে আজীবন আপনি সেই ফলের স্বাদ নিতে থাকবেন আর তখন আর আগের মতো গাছটির পিছনে পরিশ্রম করতে হবে না।

প্যাসিভ-ইনকাম-কি

অ্যাকটিভ ইনকাম ও প্যাসিভ ইনকাম এর তুলনা

অ্যাকটিভ ইনকাম এর ক্ষেত্রে আপনি যত টাকাই ইনকাম করুন না কেন একইসাথে আপনি নিজের সময় ও হারাচ্ছেন। একই সময়ে আপনি একটিই মাত্র অ্যাকটিভ ইনকাম সোর্স থেকে আয় করতে পারেন।

প্যাসিভ ইনকাম এর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার শ্রম ও সময় দুইই যথেষ্ট পরিমাণে দিতে হবে, কিন্তু একবার সেটিকে আয়ের উৎস হিসেবে ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারপর সে আপনাকে টাকা তো দেবেই তার সাথে এনে দেবে সময়ের স্বাধীনতা।

কোনটা ভালো বা কোনটা খারাপ সেই নিয়ে আলোচনা করা অমূলক, আপনার প্রয়োজন ও জীবনের লক্ষ্য অনুযায়ী আপনি ঠিক করবেন যে আপনি অ্যাকটিভ ইনকাম নিয়েই সন্তুষ্ট নাকি প্যাসিভ ইনকাম এর উৎস তৈরী করতে চান।

প্যাসিভ ইনকাম এর উপায়গুলি কি কি?

ইন্টারনেট এসে প্যাসিভ ইনকাম এর বহু পথ মানুষের জন্য খুলে দিয়েছে ফলস্বরূপ বিগত কয়েকবছরে প্যাসিভ ইনকাম শব্দটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।

কিন্তু বিষয়টি মোটেই নতুন নয়, বহুবছর ধরেই লোকে প্যাসিভ ইনকাম করে, তারা হয়তো শব্দটি ব্যবহার করেনি কিন্তু প্যাসিভ ইনকাম অনেক আগে থেকেই করেছে। তাই আগে বলবো সেই সমস্ত উপায়গুলিও কথা যা বহুদিন ধরেই চলে আসছে।

ভাড়া

এই প্যাসিভ ইনকাম এর উপায়টি বহু মানুষ বহু বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। বাড়ি, জায়গা, বা কোনো বস্তু সবই ভাড়ায় দেওয়া যায় এবং তা থেকে আপনি যে টাকা পাবেন সেটা আপনার প্যাসিভ ইনকাম কারণ এই টাকাটা পাওয়ার জন্য আপনাকে আলাদা করে কোনো পরিশ্রম করতে হচ্ছে না।

আপনার বাড়িতে আগে থেকেই অতিরিক্ত ঘর আছে, বা আপনি আলাদা একটা ঘর বানালেন ভাড়া দেওয়ার জন্য তাহলে আপনার সেক্ষেত্রে এককালীন খরচ হলো কিন্তু এরপর যখন আপনি কাউকে সেটা ভাড়ায় দেবেন তার থেকে আপনি মাসে মাসে টাকা পেতে থাকবেন তাই এটি প্যাসিভ ইনকাম।

এখন বেশিরভাগ মানুষই চারচাকা গাড়ি কিনে ফেলে কিন্তু তারপর সেটা রাখার জায়গা পায় না। আপনার যদি খালি জমি বা জায়গা থাকে তাতে আপনি হয়তো এককালীন সামান্য খরচ করে একটা টিনের শেড লাগিয়ে সেটা গ্যারাজ বানিয়ে দিলেন।

এবার ওই সমস্ত গাড়ির মালিকরা আপনার গ্যারাজে গাড়ি রাখবে আর পরিবর্তে আপনাকে প্রতি মাসে ভাড়া দেবে। আপনার এক্ষেত্রে কোনো পরিশ্রম এর ব্যাপার ই নেই তাই এটি প্যাসিভ ইনকাম। একইভাবে আপনার কোনো বস্তুও আপনি ভাড়ায় দিয়ে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।

রয়্যালটি ও rights

এর অর্থ হলো আইনি অধিকার বা স্বত্ব। কোনো লেখক যদি কোনো বই লেখে তাহলে সেই বইয়ের বিক্রি হওয়া প্রতিটি কপি র থেকে সে একটা পার্সেন্টেজ টাকা রয়্যালটি হিসেবে পায় কারণ বইটির স্রষ্টা সেই লেখক।

একইভাবে ধরা যাক কোনো প্রোডাকশন কোম্পানি একটি সিনেমা বানালো তাতে এককালীন তাদের হয়তো প্রচুর খরচ হলো কিন্তু এরপর সেই সিনেমা বছরের পর বছর ধরে হল এ চলুক বা টিভিতে যেখানেই চলুক তাদের কাছে কিন্তু ওই সিনেমার স্বত্ব বা rights থাকে যার পরিবর্তে তারা সেখান থেকে প্যাসিভ ইনকাম পেতে থাকে।

এবার আপনার মনে হতে পারে আপনি লেখক ও নন আর ভাড়া দেওয়ার মতো জমি বা জায়গাও আপনার নেই তাহলে আপনি কিভাবে প্যাসিভ ইনকাম করবেন।

চিন্তার কিছু নেই ইন্টারনেট এর যুগে প্যাসিভ ইনকাম এর উপায় ও অজস্র কিন্তু সেগুলো জানার আগে আরো একটি বহু প্রচলিত প্যাসিভ ইনকাম এর কথা জেনে নেওয়া যাক যা আমরা সকলেই করে আসছি।

সুদের হার

আপনি যেখানেই টাকা বিনিয়োগ করুন তা ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্ট হোক বা ফিক্সড ডিপোজিট, সোনাদানা হোক বা পোস্ট অফিসের কোনো স্কিম, মিউচুয়াল ফান্ড হোক বা সরাসরি কোনো কোম্পানির শেয়ার এই প্রতিটি জায়গা থেকে আপনি কিছু টাকা সুদের হার অনুযায়ী পান সময় বাড়ার সাথে সাথে এবং এর জন্য আপনাকে আলাদা করে কোনো পরিশ্রম করতে হয় না তাই আপনি যত সামান্য টাকাই সুদ হিসেবে পান না কেন সেটাও আপনার প্যাসিভ ইনকাম।

এবার বলবো ইন্টারনেট আসার ফলে যে প্যাসিভ ইনকাম এর পথগুলি খুলে গিয়েছে সেগুলির কথা, এখানে উপায়গুলি থেকে কিভাবে আয় করা যায় সেই নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো না কারণ সেগুলির বেশিরভাগ ই অনলাইন ইনকাম এর উপায় নিবন্ধে ভালোভাবে বলা হয়েছে। এখানে শুধু উপায়গুলির বিষয়ে উল্লেখ করবো।

প্যাসিভ-ইনকাম-এর-উপায়

প্যাসিভ ইনকাম এর সেরা ১০টি উপায়

১. ব্লগিং

ব্লগিং এর মাধ্যমে আপনি অ্যাডসেন্স থেকে আয় করুন, বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অথবা স্পন্সরশিপ হোক বা নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি। সবকিছুই এক্ষেত্রে প্যাসিভ ইনকাম।

২. ইউটিউব

ব্লগিং এর সবকটি আয়ের মাধ্যম ইউটিউব এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, শুধুমাত্র লিখিত কনটেন্ট এর পরিবর্তে আপনি ভিডিও কনটেন্ট ব্যবহার করবেন কিন্তু এটিও প্যাসিভ ইনকাম কারণ আপনি কোনো ভিডিও একবার বানাবেন কিন্তু সেই ভিডিও থেকে বছরের পর বছর আয় করতে থাকবেন।

৩. পডকাস্টিং

লিখিত বা ভিডিও ছাড়াও আর এক ধরনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর আপনি হতে পারেন যা হলো অডিও কনটেন্ট। পডকাস্ট থেকেও আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন অ্যাড, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পনসরশিপ ও নিজস্ব প্রোডাক্ট বিক্রি করে।

৪. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যম হিসেবে আপনি উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।

৫. অনলাইন কোর্স

যে বিষয়ে আপনি জানেন সেই সম্বন্ধে একটি ভিডিও কোর্স বানান এবং সেটিকে বিক্রি করুন। আপনি একবার ই পরিশ্রম করে কোর্স বানাবেন কিন্তু সেটি যতবার বিক্রি হবে ততবার আপনার আয় হতে থাকবে তাই এটিও প্যাসিভ ইনকাম।

৬. ই বুক লিখে

যদি আপনি ভিডিও করতে স্বচ্ছন্দ না হয়ে থাকেন তাহলে আপনি যে বিষয়ে জানেন তাই নিয়ে বই লিখে ফেলুন। এবং সেটিকে ই বুক হিসেবে বিক্রি করুন। এটাও আপনার একটি প্যাসিভ ইনকাম সোর্স হতে পারে।

৭. অ্যাপ বানিয়ে

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমেও আপনি অ্যাড, অ্যাফিলিয়েট, সাবস্ক্রিপশন, স্পনসরশিপ প্রভৃতি উপায়ে প্যাসিভ ইনকাম পেতে পারেন।

৮. সাবস্ক্রিপশন এর মাধ্যমে

আপনার বানানো যে কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর ক্ষেত্রে যদি আপনি সাবস্ক্রিপশন চালু করতে পারেন তাহলে সেটাও আংশিকভাবে প্যাসিভ ইনকাম বলা যেতে পারে।

৯. স্টক ফটোগ্রাফির মাধ্যমে

অনলাইন স্টক images বিক্রি করাও প্যাসিভ ইনকাম এর একটি উদাহরণ হতে পারে।

পড়ুন – অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার সেরা ওয়েবসাইটগুলি

১০. NFT বিক্রি করে

NFT বিক্রি করে রয়্যালটি র মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম পাওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও যে কোনো মাধ্যমে বিনিয়োগের দ্বারাই প্যাসিভ ইনকাম করা যেতে পারে।

একসাথে সব উপায় কাজে লাগাবার চেষ্টা না করে নিজের পছন্দমতো উপায় বেছে নিয়ে প্যাসিভ ইনকাম এর সোর্স তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে আপনি এক থেকে একাধিক ইনকাম সোর্স তৈরী করে ফেলবেন।

CAGR কি? XIRR কি? এগুলি কি কাজে লাগে?

টাকার দশটি সূত্র যা আপনার জীবন বদলে দেবে

The Psychology of Money Bengali Summary

DMCA.com Protection Status

Spread the love

Leave a Comment

error: Content is protected !!