লিঙ্কডইন (LinkedIn) হল বিশ্বের বৃহত্তম পেশাদারী সামাজিক মাধ্যম। মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও চাকুরিপ্রার্থীরাই লিঙ্কডইন ব্যবহার করে।
বর্তমানে লিঙ্কডইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ বিলিয়ন। এত জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও এখনো বহু মানুষই লিঙ্কডইন এর ব্যবহার সম্পর্কে অবগত নন তাই এই লেখাটিতে আমরা লিঙ্কডইন এর সঠিক ব্যবহার ও উপযোগীতা সম্পর্কে জানবো।
লিঙ্কডইন কেন ব্যবহার করবো?
১. যদি আপনার নিজস্ব কোনো ব্যবসা থাকে তাহলে ব্যবসার প্রচার ও প্রসারের জন্য লিঙ্কডইন একটি অত্যন্ত কার্যকরী মাধ্যম।
২. যদি আপনি একজন শিক্ষার্থী (student) হন তাহলে মনের মতো চাকরি বা ইন্টার্নশিপ খুঁজে পেতে লিঙ্কডইন ব্যবহার করুন।
৩. নিজের পেশাদারী দক্ষতা বৃদ্ধি করুন এবং পেশাদারদের সাথে নিজেকে যুক্ত (networking) করে নিজের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে তুলুন।
৪. নিজের পেশাদারী দক্ষতা সমগ্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরে কর্মক্ষেত্রে নিজের নিয়োগের যোগ্যতা বাড়িয়ে তুলুন।
৫. নিজের পেশাগত জীবনের সমৃদ্ধি ঘটাতে বা নতুন সুযোগ খুঁজতে লিঙ্কডইনই এই মুহূর্তে সেরা সামাজিক মাধ্যম (Social Media)।
কিভাবে একটি আকর্ষণীয় লিঙ্কডইন প্রোফাইল তৈরি করবেন?
আপনি কি জানেন কিভাবে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় লিঙ্কডইন প্রোফাইল বানাতে হয় যাতে অন্যরা নিজে থেকেই আপনার সাথে সংযুক্ত (Connect) হতে চাইবে, যদিও প্রত্যেক সোশ্যাল মিডিয়াই সময়ের সাথে সাথে নিজেদের features গুলি বদলাতে (updated) থাকে তবুও কতকগুলি বিষয় আপনার অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত
- আপনার প্রোফাইল ফটো
- আপনার হেডলাইন
- আপনার হেডার ইমেজ
- আপনার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
- আপনার অভিজ্ঞতাসমূহ
এবার আমরা এই বিষয়গুলি এক এক করে দেখবো
আপনার লিঙ্কডইন এর প্রোফাইল ফটো কিরকম হওয়া উচিত?
ছবি বিহীন একটি প্রোফাইলের তুলনায় সঠিক ছবিযুক্ত একটি প্রোফাইল যে কারোর কাছেই যে অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না কিন্তু যেহেতু লিঙ্কডইন একটি পেশাদারি (Professional) মাধ্যম তাই এখানে যে কোনো ছবি দিয়ে দেওয়া উচিত নয় ফেসবুকের সাথে একে গুলিয়ে ফেলবেন না।
নিজেই ভেবে দেখুন যদি আপনি একজন চাকুরীপ্রাথী হন এবং এমন একটি ছবি দিয়ে রাখেন যাতে আপনি হয়তো ঘরের পোশাকে রয়েছেন বা কোথায় ঘুরতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে ফুর্তি করছেন, কি মনে হয় কোনো Recruiter কি আপনার সাথে সংযুক্ত হতে চাইবে?
বা যদি আপনি কোনো চাকরির জন্য আবেদন করেন তবে আপনার ওই ধরনের ছবি দেখেই Recruiter মনে করবে আপনি নিজের কেরিয়ারের ব্যাপারে সিরিয়াস নন এবং হয়তো আপনার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আপনি শুধুমাত্র ছবির কারনে রিজেক্টেড হয়ে যাবেন।
লিঙ্কডইন এর প্রোফাইল এর ছবির ক্ষেত্রে যা যা করবেন –
একটি প্রফেশনাল ছবি দিন যাতে আপনার মুখ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
প্রফেশনাল ছবির মানে এই নয় যে পরীক্ষায় আবেদনের ক্ষেত্রে যে ধরনের পাসপোর্ট সাইজ ছবি ব্যবহার করেন তা দিয়ে দিলেন।
কোনো ফর্মাল পোশাক পরিহিত ছবিই লিঙ্কডইন এ ব্যবহার করুন।
ছবিটি যেন মোটামুটি উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার হয় অর্থাৎ ছবির মূল বস্তু যেন আপনি হন।
এমন কোনো ছবি দেবেন না যাতে আপনি ছাড়াও এমন অনেক কিছু থাকে যাতে চোখ যাবে।
উদাহরণ হিসেবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরের ছবিটি দেখুন
লিঙ্কডইন এর হেডলাইন কিরকম দেবেন?
ছবি আর নাম এই দুটোর পরেই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো হেডলাইন কারন যখনই আপনি কোনো পোস্ট করবেন বা অন্য কারো পোস্টে কমেন্ট করবেন তখনই সেখানে আপনার নামের সাথে হেডলাইনটিও দেখা যাবে তাই এর আকর্ষণীয়তার ওপরেই নির্ভর করবে অচেনা কোনো লোকও আপনার প্রোফাইল দেখবে কিনা।
তাই হেডলাইন কে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আপনি যা যা করতে পারেন সেগুলি হল –
১. আপনার পেশা হেডলাইন হিসেবে ব্যবহার করুন।
২. আপনার অর্জিত কৃতিত্ব (achievements) হেডলাইন হিসেবে লিখুন।
৩. আপনি যদি আপনার ব্যবসা বা আপনি যা কিছুই করেন তা দিয়ে অন্য কারোর কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন তাহলে আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার তথ্য বা যে সমস্যার সমাধান আপনি করতে পারবেন তা হেডলাইনে লিখুন।
কিরকম হেডার ইমেজ ব্যবহার করবেন?
যদি আপনি কোনো অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকেন বা আপনি বক্তৃতা দিচ্ছেন এমন কোনো ছবি থাকে তাহলে তা হেডার ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করুন।
আপনার ব্যবসা সংক্রান্ত ছবি বা আপনার দলের সদস্যদের সাথে গ্রুপ ফটো হেডার ইমেজে দিতে পারেন।
আপনার কোনো কৃতিত্ব (achievement) বা আপনার অর্জিত কোনো award এর ছবি দিন।
আপনার সম্পর্কে তথ্য (about) কি লিখবেন?
এই স্থানে আপনার লিঙ্কডইন এ উপস্থিত থাকার কারণ তুলে ধরুন অর্থাৎ আপনি চাকরিপ্রার্থী হলে জানিয়ে রাখুন যে আপনি কি ধরণের চাকরি খুঁজছেন।
আপনার নিজস্ব ব্যবসা থাকলে আপনি কি ধরনের সার্ভিস দেন তা সম্বন্ধে লিখুন এবং আপনার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে তাও উল্লেখ করুন।
আপনার অভিজ্ঞতাসমূহের তালিকা কিভাবে সাজাবেন?
আপনার সর্বশেষ অভিজ্ঞতা দিয়ে তালিকা শুরু করুন এবং তারপর আগেরগুলি একে একে লিখুন।
আপনি যা যা করেছেন সবকিছুই যে লিখতে হবে এরম ভাবার কোনো কারণ নেই, নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী লিখুন।
ধরুন আপনি হয়তো সদ্য কোডিং শিখেছেন এবং কোডিং এর ওপরেই কোনো চাকরি খুঁজছেন অথচ এর আগে আপনি যে চাকরি করতেন তার সাথে কোডিং এর কোনো সম্পর্কই নেই তাহলে শুধু শুধু সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা নিষ্প্রয়োজন।
অভিজ্ঞতার পরে আপনার শিক্ষা (education) সম্বন্ধে লিখুন, আপনি কোন কলেজে এবং কোন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তা পর্যায়ক্রমে লিখুন এর ফলে ওই একই প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করা লোকেদের সাথে সংযুক্ত হতে সুবিধা হবে।
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল recommendations যা লোকের কাছে আপনার বিশ্বস্ততা বাড়াতে সাহায্য করবে, আপনি আগে যাদের সাথে কাজ করেছেন তাদের প্রোফাইলে গিয়ে তাদের সম্বন্ধে ভালো recommendation দিন এবং পরিবর্তে আপনিও তাদের একই কাজ করার অনুরোধ করতেই পারেন।
সর্বোপরি এটাই বলবো উপরের প্রত্যেকটি বিষয়েই নিজের সেরা দিকটা আপনার প্রোফাইলের মাধ্যমে তুলে ধরুন এবং লিঙ্কডইন এর বৃহৎ নেটওয়ার্ককে কাজে লাগান।
গ্র্যাজুয়েশনের পরে কোন কোন সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা যায়?
লেখা পড়ে আমার অনেক ধারণা হয়েছে কিন্তু আমি ত কোন ধরনের কাজ জানি সেটাই আমার জানা নেই আর আমার যে কোন বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট নেই তাহলে আমি কি করবো
সার্টিফিকেট থাকতেই হবে এরম কোনো কথা নেই, কিন্তু কাজ তো আপনাকে জানতেই হবে। আপনি কোন ধরনের কাজ জানেন বা করতে চান সেটা তো অন্য্ কেউ আপনাকে বলে দিতে পারবে না, আপনাকে নিজেকেই ঠিক করতে হবে। আর যদি কোনো কাজ ই না জানেন তাহলে আপনার লিঙ্কডইন ব্যবহারের দরকার কি? সবার আগে কোনো একটা কাজ শিখুন বা কোনো বিষয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ান।
হাই, আমি সুমন, আপনার আর্টিকেল পড়ে অনেক উপকার হলো এবং অনেক ভালো লাগলো। আমার একটি প্রশ্ন ছিল। আমি কি এক-ই প্রোফাইলে একাধিক প্রফেশন যোগ করতে পারব। যেমন:- ডাটা এন্ট্রি এবং ভিডিও এ্যাড।
হয়তো আপনি এখানে স্কিল লিখতে গিয়ে প্রফেশন লিখেছেন। হ্যাঁ আপনি একই প্রোফাইলে একাধিক স্কিল যোগ করতে পারেন তাছাড়া প্রতিটি স্কিলের জন্য আলাদা আলাদা প্রোফাইল খুললে সেগুলো সামলানোও সম্ভব নয়।