Term Insurance (টার্ম ইন্স্যুরেন্স) করানোর আগে কি কি দেখবেন?

by

আর্থিক স্বাধীনতা লাভের জন্য হেলথ ইন্স্যুরেন্স করিয়ে রাখা যতটা জরুরি ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হলো টার্ম ইন্স্যুরেন্স করিয়ে রাখা যা অনেকেই জরুরি বলে মনে করে না।

যদি আপনার পরিবারে আপনার ওপর নির্ভরশীল কেউ থাকে তাহলে আপনার অবশ্যই Term Insurance করানো উচিত , এটা নিশ্চিত যে আপনি আপনার পরিবারের সকলকে (বাবা, মা , সন্তানসন্ততি , জীবনসঙ্গী) প্রত্যেককে খুবই ভালোবাসেন, কিন্তু শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট নয়, দরকার টার্ম ইন্স্যুরেন্স।

আপনার পরিবারের কোনো একজনও যদি আপনার ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হয় তাহলে ভাবুন কোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে যদি আপনি না থাকেন তাহলে আপনার প্রিয় সেই নির্ভরশীল মানুষটি কতটা অসুবিধায় পড়বে।

ঈশ্বর করুন যে যে এই নিবন্ধটি পড়ছেন প্রত্যেকেই পরমায়ু লাভ করুন, কিন্তু কঠিন সত্য হলো আমরা কেউই নিশ্চিতভাবে জানি না যে আমরা কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবো তাই আপনার উচিত Term Insurance করিয়ে রাখা।

Term Insurance কি?

টার্ম ইন্স্যুরেন্স হলো জীবনবীমা, যে ব্যবস্থায় আপনি একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য নিজের জীবনের বীমা করিয়ে রাখবেন এবং পরিবর্তে আপনি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে মাসে মাসে বা বছরে প্রিমিয়ামের টাকা দিতে থাকবেন।

যদি কোনো অনভিপ্রেত কারণে ওই সময়সীমার মধ্যে আপনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তাহলে আপনি যত টাকার কভারেজের টার্ম ইন্স্যুরেন্স করিয়েছেন সেই টাকা আপনার নমিনি পাবে , যাতে আপনি না থাকাতেও আপনার প্রিয়জনদের আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।

কিন্তু যদি আপনি ওই সময়সীমা পেরিয়ে যান তাহলে আপনি কিন্তু কোনো টাকাই ফেরত পাবেন না। আর এটাই অন্যতম কারণ লোকে টার্ম ইন্স্যুরেন্স কে গুরুত্ব দেয় না।

কারণ বেশিরভাগ লোক এই ধারণা নিয়েই চলে যে ইন্স্যুরেন্স করাচ্ছি মানেই ভবিষ্যতে সেখান থেকে বেশ মোটা টাকা পাবো ।

টার্ম ইন্স্যুরেন্স এর ক্ষেত্রে কভারেজের সময়সীমা পেরিয়ে গেলে আপনি এক টাকাও পাবেন না , আর এটাই কাঙ্খিত যে আপনি এক টাকাও ফেরত না পান এবং ওই সময়সীমা একদম সুস্থভাবে পেরিয়ে যান যাতে আপনার ওপর নির্ভরশীল যারা, তারাও ওই সময়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।

যেহেতু টার্ম ইন্স্যুরেন্স এর সময়কাল পেরিয়ে গেলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে কোনো টাকা ফেরত দিতে হয় না এই কারণেই এই ধরণের ইন্স্যুরেন্স এ আপনি খুব কম টাকার প্রিমিয়াম দিয়েও অনেক বেশি টাকার কভারেজ পেতে পারেন।

টার্ম ইন্স্যুরেন্সে কত টাকার কভারেজ নেওয়া উচিত ?

আপনার মাসিক আয় কত? যা পান তাকে ১২ দিয়ে গুণ করুন এবার গুনফল হিসেবে যা পাবেন অর্থাৎ আপনার বার্ষিক আয়ের অন্তত ২০ থেকে ২৫ গুণ টাকার কভারেজ নিন আপনার টার্ম ইন্স্যুরেন্স এ। 

এটা একটা সাধারণ উপায় কিন্তু আপনি আপনার দরকার , পরিস্থিতি সবকিছু বিচার করে সেইমতো কভারেজ নেবেন।

Term Insurance কত সময়ের জন্য নেবেন? 

টার্ম ইন্স্যুরেন্স এর সময়সীমা বিভিন্ন হয় কিন্তু আপনি শুধু শুধু অতিরিক্ত সময়ের জন্য নেবেন না ততটুকু সময়ের জন্যই নিন যতদিন আপনার ওপর নির্ভরশীল কেউ আছে। 

ধরা যাক এখন আপনার বয়স ৩০ এবং আগামী ৫ বছরের মধ্যেই আপনি সন্তান নেবেন, এবার আপনার সন্তানের স্বনির্ভর হতে অন্তত ২৫- ৩০ বছর সময় লাগবেই, যদি বেশিই ধরেন , ধরা যাক আপনার সন্তান যখন নিজে আর্থিকভাবে সম্পূর্ন স্বাবলম্বী হবে তখন তার বয়স ৩০, এবার সেই সময়ে আপনার বয়স হবে ৬৫।

তাহলে আপনি যদি এখন টার্ম ইন্স্যুরেন্স নেন তাহলে আপনার ৩৫ বছরের জন্য টার্ম ইন্স্যুরেন্স নেওয়া উচিত।

Term ইন্স্যুরেন্স নেওয়ার সঠিক সময় কোনটি ?

যত কম বয়সে নিতে পারবেন তত ভালো , কারণ আপনার বয়স যত কম হবে প্রিমিয়াম এর টাকার পরিমাণ তত কম হবে এবং পরবর্তীতেও এই টাকার পরিমাণ একই থাকবে , চেষ্টা করুন অর্থ উপাৰ্জন শুরুর সাথে সাথেই টার্ম ইন্স্যুরেন্স নিয়ে নিতে।

Term Insurance নেওয়ার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় দেখে নেবেন?

টার্ম-ইন্স্যুরেন্স-বা-জীবনবীমা-নেওয়ার-আগে-কি-কি-দেখবেন

Life stage benefit – টার্ম ইন্সুরেন্স নেওয়ার সময় আপনি যত টাকার কভারেজ নেবেন সেটাই কিন্তু নির্দিষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু আপনার জীবনযাত্রা তো বদলাতে থাকবে, এখন হয়তো আপনি অবিবাহিত, হতে পারে এরপর আপনি বিয়ে করলেন , তারপর আপনার সন্তানসন্ততি হলো এবং আপনার তখন মনে হলো যে আরো বেশি টাকার কভারেজ প্রয়োজন।

এই কারণেই life stage benefit এর  সুবিধা দেবে এরকম টার্ম ইন্সুরেন্স নিন যাতে পরবর্তীতে আপনি চাইলে আপনার কভারেজের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

Waiver Premium – কোনো দুর্ঘটনার ফলে যদি আপনি জীবিত থেকেও উপার্জন করার অবস্থায় না থাকেন বা কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন (যেমন -ক্যান্সার) তাহলে কোনো প্রিমিয়াম না দিয়েও যাতে আপনার পলিসি বজায় থাকে সেই সুবিধা দেয় waiver স্কিম তাই এরকম সুবিধা আছে কিনা জেনেই টার্ম ইন্সুরেন্স নিন।

Accidental cover – আপনি এই ধরণের কভারেজ যদি নেন সেক্ষেত্রে আপনি দুর্ঘটনায় মারা গেলে আপনার পরিবার বেসিক কভারেজের উপরেও অতিরিক্ত কভারেজ পাবে।

Critical illness rider – সাধারণত টার্ম ইন্স্যুরেন্স থেকে পলিসি চলাকালীন কোনো টাকা পাওয়া যায় না কিন্তু আপনি এই ধরণের rider নিয়ে রাখলে এবং ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে আপনি আপনার মোট কভারেজ থেকে একটা অংশ পেতে পারেন , সেই টাকার পরিমাণ যেটা আপনি পেতে চান আপনাকে rider নেওয়ার সময়ই নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। 

Terminal illness rider – এই ধরণের rider নিলে আপনি আপনার কভারেজের পুরো টাকাটাই পাবেন যদি ডাক্তার লিখে দেয় যে আপনি এই পৃথিবীতে আর মাত্র কিছুদিনের অতিথি অর্থাৎ আপনার বাঁচার কোনো আশা নেই, কিন্তু ডাক্তার লিখে দিলেও সেটা যে ইন্সুরেন্স কোম্পানি সবক্ষেত্রে গ্রহণ করবে এমন নয়, তাই খুব ভেবেচিন্তে এই ধরণের rider নেবেন।

Increasing cover – আপনার কভারেজ বাড়াতে এই ধরনের সুবিধা নিতে পারেন কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার প্রিমিয়াম ও বাড়তে থাকবে , তাই বেশি ভালো হয় আপনি একেবারেই বেশি কভারেজ নিন এবং প্রিমিয়াম একই রাখুন।

Decreasing cover – এই ধরণের সুবিধা বেশ লাভজনক হতে পারে কারন সময়ের সাথে সাথে আপনার সঞ্চিত অর্থ বাড়বে এবং আপনার ওপর নির্ভরশীল লোকের সংখ্যা কমবে তাই সময় বাড়ার সাথে সাথে আপনি যদি আপনার কভারেজ কমানোর সুযোগ পান তাহলে সেই সম্বন্ধে ভেবে দেখতেই পারেন।

Claim Settlement ratio – যে কোনো ইন্স্যুরেন্স নেওয়ার আগে সেই কোম্পানির ক্লেম সেটেলমেন্ট রেশিও দেখে নেওয়া অবশ্যই দরকার।

এর মানে হলো কোনো বছরে কতজন ওই কোম্পানিতে তাদের প্রাপ্য বীমার টাকা দাবি করেছে এবং কোম্পানি তাদের মধ্যে কতজনের দাবি মিটিয়েছে , ধরুন যদি মোট ১০০ জন কোনো বছরে তাদের জীবনবীমার টাকা দাবি করে থাকে এবং তার মধ্যে কোম্পানি থেকে সত্যি টাকা পেয়েছে ৯৫ জন , সেক্ষেত্রে ওই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ক্লেম সেটেলমেন্ট রেশিও হলো ৯৫%।

টার্ম ইন্স্যুরেন্স নেওয়ার আগে আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনযাপনের অভ্যাস সংক্রান্ত কোনো তথ্য গোপন করবেন না।

Amount settlement ratio – শুধুমাত্র ক্লেম সেটেলমেন্ট দেখাই যথেষ্ট নয় কারণ হতেই পারে কোম্পানি অনেক ক্লেম মিটিয়েছে সেগুলো সবই কম অ্যামাউন্টের, কিন্তু খুব বড় অ্যামাউন্টের ক্লেম কতগুলো মিটিয়েছে সেটা জানাও জরুরি আর সেটা কোনো কোম্পানির ওয়েবসাইটে পাবেন না এর জন্য আপনাকে IRDA র annual report দেখতে হবে।

Solvency ratio – একই সময়ে একসঙ্গে অনেকগুলো ক্লেম এসে গেলে কোম্পানি সেগুলো মেটাতে কতটা সক্ষম তা জানার জন্য এই ratio কাজে লাগে, এটিও অবশ্যই দেখে নেবেন।

আশা করি খুব সংক্ষেপেও টার্ম ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এই নিবন্ধে তুলে ধরতে পেরেছি, নিজেও সচেতন হন এবং নিবন্ধটি প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও সচেতন করে তুলুন।

DMCA.com Protection Status

Spread the love

Leave a Comment

error: Content is protected !!