অবস্থান ও পরিচয়
লবণধার গ্রাম পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের দেবশালা অঞ্চলের বড়ডোবা মৌজায় অবস্থিত।
এই ছোট্ট গ্রামটি প্রকৃতির কোলে, শাল-সেগুন-মহুয়া গাছের জঙ্গলে ঘেরা এবং স্থানীয় ভৌগোলিক পরিবেশ ও মানুষের জীবনযাত্রার জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: “আলপনা গ্রাম”
গ্রামটি “আলপনা গ্রাম” বা “ছবি গ্রাম” নামেই বেশি পরিচিত।
এর কারণ, এখানকার প্রতিটি বাড়ি, মন্দির, দেওয়াল, স্কুল, এমনকি গ্রাম্য স্থাপনার গায়ে রয়েছে অসাধারণ দেওয়ালচিত্র, প্রদর্শনী এবং আলপনা—যা আদিবাসী শিল্প ও সংস্কৃতির অপূর্ব ঐতিহ্যের প্রকাশ।
পাশ্চাত্য ‘ম্যুরাল পেইন্টিং’-এর মত বাংলার নিজস্ব টেকনিক।

দেওয়ালচিত্র ও আঁকার রঙ
- দেওয়ালে দেখা যায়: মনসা মন্দিরের সাপ, রাধাকৃষ্ণ, পৌরাণিক কাহিনী, পশু-পাখি, মাছ, শস্য, গ্রামীণ জীবন, জঙ্গলের পরিবেশ।
- রঙের উৎস:
পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
- জঙ্গলমহলের প্রাণবন্ত পরিবেশ, পাখির কিচিরমিচির, ময়ূরের দেখা মেলে।
- গ্রাম ঘিরে প্রায় ৪ কিলোমিটার জঙ্গল—অরণ্যের মাঝেই আদিবাসী জনবসতি।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ
- গাছপালা সংরক্ষণ ও বনসৃজন প্রচারে স্থানীয় যুবকদের সংগঠনের উদ্যোগে ছবির মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব সচেতনতা বাড়ে।
- গ্রামের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা হয়।
- অতিথি আগমন ও গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রচারের জন্য হোমস্টে তৈরি হয়েছে—যে কেউ রাত্রিযাপন করতে পারেন।
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
- এক দিনের ছুটিতে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, শিল্পভবন ও সংস্কৃতি উপভোগ করতে কলকাতা থেকে সহজে আসা যায়।
- পুজোর সময় ও রথযাত্রার মরসুমে প্রচুর পর্যটক আসেন।
উপসংহার
- যুগ যুগ ধরে আদিবাসী বাঁক, প্রাচীনচর্যাপদ যুগের সৌন্দর্য, আধুনিক শিল্পবোধ—সব মিলিয়ে লবণধার এক অনন্য নজির।
- গ্রামের রমণীরা ও স্থানীয় মানুষ, শত দুঃখ-কষ্টে, শিল্পপ্রেম ও সৃজনশীলতার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে চলেছেন।
