এই নিবন্ধের মূল বিষয় হলো উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের সরকারি বিভিন্ন স্কলারশিপ স্কিম সম্পর্কে অবগত করা।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে ৬ টি স্কলারশিপ রয়েছে তার প্রতিটির বিষয়ে এক এক করে তথ্য পরিবেশন করা যাতে ছাত্রছাত্রীরা সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
প্রথম স্কিম হল – স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ যদিও এটি স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ নামেই অধিক পরিচিত।
২০২২-২৩ বর্ষের জন্য এই স্কলারশিপের আবেদন গ্রহণ এখনো চলছে যা শুরু হয়েছিল ১৭-০৮-২২ তারিখে।
সরকার স্কলারশিপ দেয় কেন ?
আমরা সবাই জানি শিক্ষা (তা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হোক বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেওয়া শিক্ষা) যে কোনো মানুষকে তার বর্তমান অবস্থানের স্তর থেকে আরো কিছুটা উপরের স্তরে উন্নীত করে।
শিক্ষার মূল উদেশ্য হলো বেশিরভাগ মানুষকে আর্থসামাজিক দিক থেকে বলিষ্ঠ করে দেশের সামগ্রিক উন্নতিসাধন।
আর দেশের সামগ্রিক উন্নতি শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় ধনী শ্রেণীর মানুষের উন্নতির দ্বারা সম্ভব নয়, তা একমাত্র সম্ভব সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের সার্বিক উন্নতিসাধনের দ্বারা। আর এখানেই সার্বিক শিক্ষার মাহাত্ম্য।
শিক্ষালাভের সুযোগ মানুষকে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভর করে তোলে তাই মানবিক যে কোনো সরকারের প্রধান একটি উদেশ্য থাকে যাতে সমাজের সেইসব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া যাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আছে, যাতে তারা পড়াশোনা ( উচ্চশিক্ষা ) চালিয়ে যেতে পারে এবং দেশ ও সমাজ সম্ভাব্য প্রতিভার সামর্থ্যর সম্পূর্ণ ব্যবহার করে উন্নতিসাধন করতে পারে।
আর আমরা সবাই জানি যে পৃথিবীর বেশীরভাগ মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষের দ্বারা।
তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারা ২০১৬ সালে স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ চালু হয় সর্ব স্তরের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভের পথ খুলে দিতে।
কারা স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ পেতে পারবে ? –
মাধ্যমিক পাস্ করার পর পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে গেলে প্রতিটি স্তরেই এই স্কলারশিপ পাওয়া যাবে।
অর্থাৎ, মাধ্যমিক পাস্ করে উচ্চমাধ্যমিক পড়লে তখন পাওয়া যাবে, আবার উচ্চমাধ্যমিক পাস্ করে যেকোনো বিষয়ে রেগুলার কোর্সে স্নাতক ( BA , BSc , BCOM ইঞ্জিনিয়ারিং , মেডিক্যাল, ডিপ্লোমা / যে কোনো টেকনিক্যাল কোর্স / ম্যানেজমেন্ট কোর্স), স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চালিয়ে গেলে এই স্কলারশিপের্ জন্য আবেদন করা যাবে।
আর্থিক সীমা – যাদের পারিবারিক আয় বার্ষিক ২.৫ লক্ষ টাকার বেশি নয়, তারাই এই স্কলারশিপের্ জন্য আবেদন করতে পারবে।
পড়াশোনার কোন স্তরে আবেদন যোগ্য/ স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ কারা পাবে? | যোগ্যতা নির্বাচনে প্রাপ্ত নম্বরের মাপকাঠি | কোন কোন বিভাগে | স্কলারশিপের দরুন প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ (টাকায়)/মাসে |
উচ্চমাধ্যমিক/HS স্তরে – ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন থেকে মাধ্যমিক পাস্ করার পর উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা চলাকালীন (অন্য কোনো বোর্ডের ছাত্রছাত্রী এই স্কলারশিপের্ জন্য আবেদন করতে পারবেনা) | মাধ্যমিকে ৬০% নম্বর পেতে হবে (যারা ২০২২-২০২৩,২০২১-২০২২ সালে মাধ্যমিক পাস্ করেছে তাদের জন্য) (আর যারা ২০২০ বা তার আগে মাধ্যমিক পাস্ করেছে তারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে গেলে তাদের ৭৫% নম্বর পেয়ে থাকতে হবে মাধ্যমিক স্তরে ) | আর্টস, সায়েন্স, কমার্স সমস্ত বিভাগে | ১০০০ |
ডিপ্লোমা পড়াকালীন – | ৬০% নম্বর পেয়ে ২০২২-২০২৩,২০২১-২০২২ সালে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস্ করতে । আর যদি কেউ তার আগে মাধ্যমিক পাস্ করে থাকে তাহলে তাকে ৭৫% নম্বর সহ মাধ্যমিক পাস্ করে থাকতে হবে উচ্চমাধ্যমিক বা পরবর্তী উচ্চশিক্ষা লাভের (যেমন ডিপ্লোমার) জন্য আর যদি কেউ মাধ্যমিক পাস্ করে AICTE / WBSTC / VE&SD/ স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি , দ্বারা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা পড়ে (যেকোনো স্ট্রিমে ; ইঞ্জিনিয়ারিং /ফার্মাসি/ বিভিন্ন পেশাদার কোর্স ), ল্যাটেরাল এন্ট্রি দিয়ে BTech /ইঞ্জিনিয়ারিং/ বি ফার্ম করতে চায় তাহলে তাকে ডিপ্লোমা তে ৬০% নম্বর নিয়ে পাস্ করতে হবে। | ১৫০০ | |
স্নাতক স্তরে -(কলেজে গ্রাজুয়েশন পড়াকালীন) WBCHSE থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস্ করতে হবে | উচ্চমাধ্যমিকে ৬০% নম্বর পেতে হবে | স্নাতক স্তরে আর্টস কমার্স , বিজ্ঞান বিভাগে আলাদা আলাদা মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয় স্নাতক স্তরে আর্টস স্নাতক স্তরে কমার্স স্নাতক স্তরে সায়েন্স স্নাতক স্তরে অন্যান্য টেকনিক্যাল কোর্স স্নাতক স্তরে মেডিকেল পড়ার জন্য | ১০০০ ১০০০ ১৫০০ ১৫০০ ৫০০০ |
স্নাতকোত্তরে (বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পড়াকালীন) | স্নাতকস্তরে (PG /পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ) ১) অনার্স সহ ৫৩% নম্বর পেয়ে পাস্ করতে হবে পশ্চিমবঙ্গের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । শুধুমাত্র অনার্সের বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরই গ্রহণযোগ্য হবে। ২) যদি ইঞ্জিনিয়ারিং/ফার্মাসি পড়ার ক্ষেত্রে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন/M.Tech /ME / করার জন্য আবেদন করতে হয় তাহলে ৫৫% নম্বর পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের কোনো ইনস্টিটিউট থেকে পাস্ করতে হবে। ৩) যারা MPhil করছে তারাও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। | PG আর্টস PG কমার্স PG সায়েন্স PG UGC দ্বারা স্বীকৃত অন্যান্য কোর্স নন নেট MPhil /নন নেট পিএইচডি | ২০০০ ২০০০ ২৫০০ ২৫০০ ৫০০০-৮০০০ |
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ –
১) যদি কোনো ছাত্রী কন্যাশ্রীর K -২ এর সুবিধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে সে যদি রাজ্যের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করে (যে কোনো স্ট্রিমে) তাহলে তাকে স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ পেতে গেলে স্নাতকে ৪৫% নম্বর পেয়ে পাস্ করতে হবে।
এই স্কলারশিপের আবেদনের সময় তাকে আর ইনকাম সার্টিফিকেট দিতে হবেনা। নির্দিষ্ট ছাত্রী স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের অধীনস্থ K-৩ (k3 scholarship) স্কলারশিপের অধীনে বৃত্তি স্কলারশিপ পাবে।
২) যদি এই স্কলারশিপ কেউ পায় তাহলে সেই পড়ুয়া রাজ্য বা কেন্দ্রের অন্য কোনো স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
৩) এই স্কলারশিপের আবেদন পদ্ধতি সম্পূর্ণ রূপে অনলাইন। সরকারি ফান্ড এসে গেলে যদি পড়ুয়ারা যোগ্য নির্বাচিতদের তালিকাতে থাকে তাহলে সরাসরি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে।
৪) আবেদন পত্রের হার্ডকপি সাবমিশনের কোনো প্রয়োজন নেই।
জেনে নিন : –
কন্যাশ্রী K ১ কারা –
১৩-১৮ বছর বয়সী বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা, যারা প্রতি বছর ৭৫০ টাকা পায়।
কন্যাশ্রী K ২ কারা –
১৮-১৯ বছর বয়সী অবিবাহিত ছাত্রীরা যাদের পারিবারিক মাসিক যায় ১০,০০০ টাকার নিচে।
কন্যাশ্রী K ৩ কারা –
সেইসব ছাত্রীরা যারা পোস্ট গ্রাজুয়েশন( স্নাতকোত্তর পড়াশোনা ) করছে।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ এ কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?

- সবচেয়ে শেষের পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড।
- সবচেয়ে শেষের পরীক্ষার মার্কশিট।
- ইনকাম সার্টিফিকেট।
- ব্যাঙ্ক পাস্ বই এর প্রথম পৃষ্ঠার ছবি।
- মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট।
- রেশন / আধার / ভোটার ইত্যাদি।
- আবেদন পদ্ধতি – (শুধুমাত্র অনলাইনেই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারা যাবে)।
স্কলারশিপের্ আবেদনের জন্য স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ ওয়েবসাইট – www.svmcm.wbhed.gov.in যেতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন বাটন এ ক্লিক করতে হবে।
apply for fresh application এ ক্লিক করতে হবে।
নিজের নাম, জন্ম তারিখ , মেইল আইডি, দিয়ে নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন সফল হবার পর একটি অ্যাপ্লিকেশন ID পাবে, যেটা দিয়ে লগ ইন করতে পারবে নিজের ড্যাশবোর্ড অ্যাকাউন্টে।
এরপর নিজের সমস্ত তথ্য, স্ক্যান করা ছবি, নিজের সই দিয়ে আবেদন ফর্ম ফিল আপ করে সেভ নেক্সট এ যেতে হবে।
এরপর কিছু ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
এরপর সেভড সমস্ত তথ্য একবার ভালো করে চেক করে ফাইনাল সাবমিট বাটন / finalise application এ ক্লিক করলেই আবেদন সম্পূর্ণ হল। (এরপর আর নিজের কোনো তথ্য বদলানো যাবে না)
স্বামী বিবেকানন্দ বৃত্তি / স্কলারশিপ কারা পাবে তা ঠিক হয় কিভাবে ?
প্রথমে যারা আবেদন করছে তাদের আবেদনগুলি যাচাই করা হবে।
তাদের মধ্যে যাদের ডকুমেন্টস ঠিক থাকবে তারা যোগ্য নির্বাচিত হবে।
পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ও আয়ের উপর নির্ভর করে তালিকা প্রকাশ হবে, ( প্রতি স্ট্রিমের আলাদা আলাদা তালিকা থাকবে )
সেই তালিকা অনুযায়ী যোগ্য আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে।
এখানে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী লিস্ট প্রকাশ করা হবে। যখন ফান্ডে টাকা আসবে সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী টাকা উপভোক্তাদের ব্যাংকে পৌঁছে যাবে।
স্কলারশিপের জন্য সরাসরি অফিসিয়াল দপ্তরের যোগাযোগ মাধ্যম –
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট – https://svmcm.wbhed.gov.in/
ফোন নম্বর -18001028014 (টোল ফ্রি)।
মেইল আইডি – helpdesk.svmcm-wb@gov.in
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ কোথায় জমা দিতে হবে ?
কোথাও হার্ডকপি জমা দিতে হবে না। সম্পূর্ণ পদ্ধতি অনলাইনেই হবে। টাকা সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ এ কত টাকা পাওয়া যায় ?
উপরের তালিকাতে সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ এর টাকা কবে ঢুকবে ?
সরকার থেকে ফান্ড যখন আসবে তখন ঢুকবে।
স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ Renewal পদ্ধতি –
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ এর অনলাইন ওয়েবসাইট/পোর্টালে http://svmcm.wbhed.gov.in গিয়ে Applicant LogIn এ ক্লিক করুন।
আগের বছরের SVMCM Applicantion ID ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন।
লগ ইন করলেই নিজের সমস্ত তথ্য দেখতে পাবে, তা চেক করে “Apply For Renewal Application”।
এবার কারেন্ট বছর বেছে নিয়ে আগের বছর যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়েছেন সেই অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে Renewal Authentication বাটন এ ক্লিক করতে হবে।
কারেন্ট সেমেস্টার এর তথ্য প্রদান করতে হবে ও লাস্ট পরীক্ষার সমস্ত নম্বর প্রদান করতে হবে।
মার্কশিট ও হায়ার ক্লাস অ্যাডমিশন এর রিসিপ্ট পিডিএফ ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে এবং নিজের অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করতে হবে।
যে ফর্মটি ফিল আপ করলেন সেটা ডকুমেন্ট হিসেবে সেভ করে রেখে দিন ভবিষ্যতে যদি দরকার লাগে দেবার জন্য।
গ্র্যাজুয়েশনের পর কোন কোন সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা যায়?
পশ্চিমবঙ্গে ডোমিসাইল সার্টিফিকেটের জন্য বাড়িতে বসে কিভাবে আবেদন করবেন?